অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ২০ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা গায়েব হয়। আজ পর্যন্ত এই টাকার কোনো হদীস মিলেনি। স্বাধীনতার পর তৃতীয় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা। প্রথম অস্ত্র হাতে ব্যাংক ডাকাতি করেছিল শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। এরপর ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডিজিটাল কায়দায় টাকা চুরি করেছে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়।
সূত্র বলছে, সরকারের লোকজনই গত ২০ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংকের একটি শাখা থেকে টাকা সরিয়েছে। যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সমালোচনা এড়ানোর জন্য দায়সারা ভাবে একটি জবাব দিয়েছে যে, একজন ভিআইপি গ্রাহককে সন্ধ্যার পর এই টাকা দেয়া হয়েছে। তাদের এই জবাব নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। তাদের দেয়া জবাবটিও অর্থনীতিবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইনগতভাবে এদেশে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ ভিভিআইপি নাই। তাহলে নিসন্দেহে তাদের কোনো লোক এসে এই টাকা নিয়েছে। এখন ইউনিয়ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি বলে যে সরকারের লোকজন টাকা নেয়নি তাহলে তাদেরকে বলতে হবে যে কোন ভিভিআইপি গ্রাহক এই টাকা নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই গ্রহকের নাম প্রকাশ করেনি। এতে পরিষ্কার হয় যে এই টাকা তারা লুট করেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের টাকা চুরি করেছে ক্ষমতাসীন নেতারা এর প্রমাণ দেখাতে যৌক্তিক তিনিট কারণও ব্যাখ্যা করেছের অর্থনীতিবিদরা।
প্রথমত, ইউনিয়ন ব্যাংকের দেওয়া ব্যাখ্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, সন্ধ্যার পর এত নগদ টাকার বৈধ ব্যবহারের সুযোগ নেই। আবার নগদে ১৯ কোটি টাকা বহন সহজও নয়। সাধারণভাবে ব্যাংকিং সময়েও কেউ শাখা থেকে নগদে এত টাকা তুলতে চাইলে মৌখিকভাবে হলেও আগাম নোটিশ করে। একসঙ্গে এত টাকা নিতে আলাদা গাড়ি, পুলিশ প্রোটেকশন লাগে। আবার এ পরিমাণ টাকা রাখার জন্য ভল্ট দরকার হবে। যে কারণে সাধারণভাবে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন ব্যক্তি টাকা জমা দিলেও উত্তোলন করেন না। ফলে এক রাতে বৈধ উপায়ে এত অর্থ সরানোর বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, শাখা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ পরিমাণ টাকা সরালে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতো। ফলে প্রভাবশালী কেউ যে এই অর্থ সরিয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তৃতীয়ত, ইউনিয়ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক পদক্ষেপেই প্রমাণ হয় যে এই টাকা তারা কোনো গ্রাহককে দেয়নি। কারণ, গ্রাহককে টাকা দিলে তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল কেন? বৈধ লেনদেন করলেতো কর্মকর্তাদের কোনো অপরাধ নেই। এছাড়া তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বৈধ লেনদেন হলে তদন্ত কমিটি গঠনের দরকার পরে কেন?
এছাড়া একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন গভর্নরের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের কারণে ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ভবন তৈরির জমি কেনার সময়ও তারা সরকারের মোটা অংকের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে। ২০১৭ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের এই ট্যাক্স ফাকির অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলেও ব্যাংকের উর্ধতন মহলের চাপে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা সেটা তদন্ত করতে পারেনি। এমনকি ওই বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে সরিয়ে দিয়েছিল।
Discussion about this post