ক্ষমতাসীন সরকারের কথিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিকে কে ভোট দেবে? আমি সব সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করি যে কারা কেন? কী কারণে? কোন স্বপ্নে? কী সুখে? কোন আশার আলো দেখে বিএনপিকে বা অন্যদেরকে ভোট দেবে?
তার এমন প্রশ্নের পর তা নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। এমন প্রশ্নের জবাবও দিয়েছের রাজনীতিবিদ, রাজনীতি নেতাসহ সচেতন মহল। অনেকেই আবার উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে কেন ভোট দেবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলও শেখ হাসিনার মন্তেব্যের কঠর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন বিএনপিকে জনগন কেন ভোট দিবে? আওয়ামী লীগ ছাড়া জনগনের পছন্দ করার মতো আর কে আছে?
এসব প্রশ্ন তিনি করতেই পারেন। তবে উত্তর দেয়ার ভারটা জনগনের উপর ছেড়ে দিতে হবে। কারণ সংবিধান অনুসারে এই উত্তর দেয়ার অধিকার একমাত্র জনগনের।
তিনি শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা করে বলেন, আশা করবো জনগনের এই অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়ার আত্নবিশ্বাস আওয়ামী লীগের থাকবে।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও শেখ হাসিনার এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাঁচার জন্যই দেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে।
তিনি বলেন,দেশের মানুষ এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। বিএনপির একমাত্র দল যারা দেশের মানুষকে একটু শান্তি দিতে পেরেছিল। এজন্যই মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। ‘বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে’ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাঁচার জন্যই জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে আওয়ামী লীগ গত ১২ বছরে দেশের যে অবস্থা তৈরি করেছে, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই, জীবিকার কোনো নিরাপত্তা নাই, চারদিকে ভয় ত্রাস সন্ত্রাস ছাড়া কিছু নাই । এর ফলে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এজন্যই মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে যে, আওয়ামী লীগ দশ টাকায় চাল খাওয়ানোৱ কথা বলে ৭০ টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে, বিনা পয়সায় সার দেবে বলেছিল। এখন সারের দাম আকাশচুম্বী। এসব কারণেই মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটির অভিজ্ঞতার রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সার্চ কমিটির নামে দলীয় লোকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কমিশন গঠন করেছেন। আর সেই কমিশন অনেক ক্ষেত্রে সরকারের থেকেও আগবাড়িয়ে দলীয় ভূমিকা পালন করেছে। যেটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটি একটা ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি আরো বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। এটি আমার কথা নয়, সাবেক নির্বাচন কমিশনার সহ সকলেই বলেছেন। আপনি যতই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন না কেন, সরকার যদি তাদের সাথে সহযোগিতা না করে তাহলে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, পরিষ্কার করে বলছি, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন নির্বাচন খেলায় জনগণ আৱ অংশ নেবে না। ২০১৪ সালে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলো। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট চুরি করে নিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এখন তারা (আওয়ামী লীগ) বলছে আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৫০ টি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে। তালহে হয়ে গেলো, ১৫০ টি আসন নিয়ে গেলে আর তো কিছু লাগে না।
তিনি আরও বলেন, তারা যদি সত্যিকার অর্থ একটি নির্বাচন চায়, তাহলে আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বসতে হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হতে হবে আওয়ামী লীগকে। তারপর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন নামে একটি প্রহসন হবে।
সরকারের সাথে সংলাপে বসার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংলাপে ছাড় দেওয়া বিষয়টি পরে আসবে। আগে সরকার বিরোধী দলগুলোর সাথে বসবে কিনা সেটাই বিষয়। এখানে একটাই ইসু থাকবে। সেটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। আমরা কিছুই চাই না, শুধু নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। আমরা তো কোনো অন্যায় দাবি করছি না। এখন এই ইস্যুতে সরকার বসতে না চাইলে কিছু তো করার নেই।
বিএনপির নির্বাচনকালীন নেতা কে হবেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা খালেদা জিয়া।
সাংবাদিক এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া। এজন্য তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রেখেছে। তাকে এতো ভয় পান যে, বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দেন না। তিনি মুক্তি পেলেই জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে, তা সামলাতে পারবে না। এই কারণে তাকে মুক্তি দেন না তারা।
আগামী নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে হবে এবং সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান কোনও বাইবেল নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না। মানুষের প্রয়োজনেই সংবিধান।
Discussion about this post