অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখন গত বছরের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। মৃতের সংখ্যাও এরই মধ্যে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি মাসে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। কিন্তু এরমধ্যেই হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ শয্যাসহ সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন-পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।
গত বছর সারাদেশে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে মূল কারণ ছিল সরকারের খামখেয়ালি। কোনো প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল-করোনা মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত। সব ধরণের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। পরবর্তীতে দেখা গেল-করোনার উপসর্গ নিয়ে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি। যারা ভর্তি হয়েছেন তারাও সঠিকভাবে চিকিৎসা পাননি। বিনা চিকিৎসায় মানুষ রাস্তা-ঘাট, হাসপাতালের মাঠ ও সিড়িতে পড়ে মারা গেছে।
এরপরও শেখ হাসিনা দাবি করেছেন তারা সঠিকভাবে করোনা মোকাবেলা করেছেন। শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যসেবা নাকি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। অথচ করোনায় সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ নেই দেশের হাসপাতালগুলোতে।
সংকটাপন্ন করোনা রোগীর প্রাণ রক্ষায় অপরিহার্য একটি মেডিকেল ডিভাইস হলো হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা (এইচএফএনসি)। গত বছর মহামারীর সূচনালগ্নেই আলোচনায় আসে ডিভাইসটি। সরকারি হাসপাতালগুলোয় ডিভাইসটির সংকট সে সময় মারাত্মক আশঙ্কার কারণ হয়ে দেখা দেয়। মাঝে কয়েকটি হাসপাতালে কিছু এইচএফএনসি স্থাপন করা হলেও তা ছিল অপ্রতুল। বর্তমানে হাসপাতালগুলোয় বিদ্যমান ডিভাইসগুলোর মধ্যে অনেক অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিভাইসটি নিয়ে পুরনো সে শঙ্কা আবার ফিরে এসেছে।
বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের হাসপাতালগুলোয় এ নিয়ে শঙ্কা সবচেয়ে বেশি। আইসিইউসহ প্রয়োজনীয় নানা সুবিধার অপর্যাপ্ততায় হাসপাতালগুলো বেশ নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এইচএফএনসির সরবরাহ বাড়ানো গেলে এ পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যেত বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এইচএফএনসির সংখ্যা হাজারেরও কম। সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এইচএফএনসি রয়েছে মোটে ৯৮০টি। এর মধ্যে শুধু সরকারি (কভিড ও নন-কভিড) হাসপাতালগুলোয় ডিভাইসটি রয়েছে ৭২৭টি। গত বছরের মাঝামাঝি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নতুন করে এইচএফএনসি সরবরাহ করা হয়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মেডিকেল ডিভাইসটি নষ্টের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
দেশে করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে রাজধানীতে। এখানে সরকারিভাবে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল রয়েছে আটটি। এসব হাসপাতালে এইচএফএনসি রয়েছে মোটে ১৫৭টি। এর মধ্যে আবার ২২টিই নষ্ট। সংকটাপন্ন করোনা রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে আরো অন্তত ১২২টি এইচএফএনসি প্রয়োজন বলে মনে করছে হাসপাতালগুলো।
হাসপাতালগুলোর চাহিদাপত্রের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক এইচএফএনসি রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৮টি। এর মধ্যে ১৬টি নষ্ট। আরো ২০টি এইচএফএনসি স্থাপনের চাহিদা রয়েছে হাসপাতালটির। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ৩০টি। এর মধ্যে নষ্ট ছয়টি। এ হাসপাতালে আরো ২৫টি এইচএফএনসি স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে বিদ্যমান ৩৯টির সঙ্গে আরো ছয়টি স্থাপনের চাহিদা দেয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এ ডিভাইস রয়েছে ২০টি। হাসপাতালটি এ সংখ্যা দ্বিগুণ করতে চাইছে। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এইচএফএনসির সংখ্যা বিদ্যমান ছয়টি থেকে বাড়িয়ে ২১টি করার কথা বলা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চারটি এইচএফএনসি রয়েছে। এ ডিভাইস আরো ছয়টি স্থাপন করতে চায় হাসপাতালটি। এছাড়া স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে কোনো এইচএফএনসি নেই। এখানে জরুরি ভিত্তিতে আরো ১০টি স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে হাসপাতালটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন-করোনা পরিস্থিতি যেভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে-তাতে মনে হচ্ছে এবছরও রোগীদেরকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হবে। আসলে করোনা মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রী স্বাস্থ্যখাত নিয়ে শুধু গলাবাজি ও চাপাবাজি করছে।
Discussion about this post