অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাকে চাপা দেয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের সকল প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়ে পড়েছে তখন দিক হারিয়ে উদ্ভট কথাবার্তা শুরু করেছেন মন্ত্রীরা। সারা বিশ্বে যখন ভ্যাকসিনের মাধ্যমে করোনা মোকাবেলার চেষ্টা চলছে, তখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনাকে বালিশ চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করছেন।
জাহিদ মালেক বলেছেন, “ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে কি না জানি না। কোভিড-১৯ এমনিতেই বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে। মানুষ এখন বাসায় বসেই চিকিৎসা পায়। তাই তাদের হাসপাতালে আসতে হয় না। এজন্য হাসপাতালে রোগী কম। আমরা আনন্দিত, দেশে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু হার কমেছে।”
অথচ সরকারি হিসাবেই প্রতিদিন করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫ এর উপরে। এছাড়া, সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু তো আছে। যেগুলো কখনো সরকারি হিসাবে আসে না। এছাড়া, প্রতিদিন সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার। কিন্তু বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি।
গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বন্ধ করে দেয় নিয়মিত করোনা বুলেটিন। এর ব্যাখ্যায় স্বাস্থ্যের নতুন ডিজি ডা. খুরশীদ আলম বলেছেন-নিয়মিত মৃত্যুর সংবাদ দেয়া মানসিক নির্যাতন। যিনি বুলেটিনটি প্রচার করেন তার উপর নাকি মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
আচ্ছা, সব দেশেইতো এখন নিয়মিত করোনার আপডেট প্রচার হচ্ছে, তাহলে তারা কি মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কি লোকের সংকট আছে? আপনারা প্রতিদিন একজনকে দিয়ে বুলেটন প্রচার করাচ্ছেন কেন? বুলেটিন বন্ধের আসল উদ্দেশ্য মানসিক নির্যাতন নয়।
এই বুলেটিন বন্ধ হওয়া নিয়ে যখন বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হতে থাকে-তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ হার কমে আসছে। তাই বুলেটিন বন্ধ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেদিন এই বক্তব্য দিয়েছিলেন সেদিনও করোনায় মারা গেছে ৪০ জন। তাহলে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমলো কিভাবে? আর সংক্রমণও প্রতিদিনি ৩ হাজারের বেশি হচ্ছে।
আসল কথা হলো-দেশে করোনা সংক্রমণ কমে নাই। সরকার পরিকল্পিতভাবে টেস্ট কমিয়ে এনে করোনা সংক্রমণ কমার কথা বলছে। এটা হলো-করোনাকে চাপা দেয়ার একটা সরকারি কৌশল মাত্র।
তারপর সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রাণঘাতী এই করোনা নিয়ে পুরো বিশ্বই এখন অস্থির। করোনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা বিশ্বের জীবন-যাত্রা ও অর্থনৈতিক অবস্থা। আমরা যদি আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের দিকে তাকায় তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আজকের সর্বশেষ হিসাব মতে ভারতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। করোনা মোকাবেলা করতে না পেরে দেশটিতে এখন চরম অস্থিরতা চলছে।
এই অবস্থায় সারা বিশ্ব এখন করোনা মোকাবেলায় ঝুকছে ভ্যাকসিনের দিকে। মানুষের জীবন ও অর্থ বাচাতে তারা এখন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই ‘উদ্ভট’ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্ভট এক লোক। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য পড়ে এক ভদ্র আমাকে বললেন যে, কোনো পাগলের তেল-টেল থাকলে একটু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া দরকার। যাতে তার এই আবোল-তাবোল বলার যে পাগলামীটা এটা যেন কমে। যে কোনো জায়গা থেকে পাগলের তেল তার কাছে পাঠিয়ে দিলে সবচেয়ে ভালো হয় এবং দেশের মানুষ উপকৃত হয়।”
মহামারীকালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে জাহিদ মালেক শনিবার এক সভায় বলেছিলেন, “ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে কি না জানি না। কোভিড-১৯ এমনিতেই বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে।”
তার ওই বক্তব্য নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার মধ্যে রোববার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গ টানেন বিএনপি নেতা রিজভী।
তিনি বলেন, “গ্রামে-গঞ্জে তৃণমূলে করোনার ব্যাপ্তি এত তীব্র হয়েছে যেটি চিন্তা করা যায় না। আমি কয়েকদিন আগে উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলা সফর করে এসছি। আগে যেগুলো মহকুমা ছিল, নতুন জেলা হয়েছে, সেখানে কোনো চিকিৎসা নেই। আমার দেশের বাড়ি কুড়িগ্রাম। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে রোগীদের।
“যে ব্যক্তিটি চিকিৎসার রংপুর গেছেন তিনি একজন নামকরা আইনজীবী, দেশের প্রথম নারী পিপি ছিলেন। প্রথমে বলা হয়েছে তার হার্টে সমস্যা হয়েছে। পরে বিকালে নিয়ে যাওয়ার পর মারা গেছেন। টেস্ট করে দেখা গেলো তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এই বিভীষিকা সর্বত্র।”
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক বুলেটিন প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সমালোচনাও করেন বিএনপি নেতা।
“প্রতিদিন ব্রিফিং করে বললেও তো মানুষ কিছু জানতে পারছে। এটাতে সরকার মনে করছে, তারা বিব্রত হচ্ছেন। এজন্য ব্রিফিং তারা বন্ধ করে দিয়েছেন।”
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কারণে গোটা স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য বিরাজ করছে। চোর-ডাকাত-জালিয়াত-ঠকবাজে ভর্তি স্বাস্থ্য খাত।
“প্রতিদিন খবর বেরুচ্ছে, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট এই স্বাস্থ্য খাতের সাথে জড়িত। নকল মাস্ক, নকল পিপিই, সব কিছুর জন্য এক ধরনের জালিয়াতি চক্র তৈরি হয়েছে এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে। এমনটি তার নিজের ছেলের কথা শোনা যায় যে, সে এই নকল মাস্কের ব্যবসার সাথে জড়িত।”
“আর উনি মানুষকে ছবক দিচ্ছে যে, এটা (করোনা) না কি কমে গেছে!”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘করোনা জনসচেতনতামূলক গান ও ভিডিও ক্লিপের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রিজভী।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তার ছিড়া মন্ত্রী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন মন্ত্রীর মাথার তার ছিড়ে গেছে। যার কারণে প্রতিদিনই তিনি উল্টো পাল্টা কথা বলছেন। তাকে এখন পাবনার পাগলা গারদে নেয়া দরকার। অনেকেই আবার বলছেন সরকার দিক হারিয়ে এখন বেসামাল হয়ে গেছেন।