অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আবারও সমালোচনায় এসেছে সিকদার গ্রুপ। বহুদিন ধরে ক্ষমতাসীনদের আশকারায় লুটিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। দেউলিয়া করছে দেশের ব্যাংকিং খাত। তারাই ধারাবাহিকতায় এবার চোখ পড়ে এক্সিম ব্যাংকের ওপর। জামানত না দিয়ে এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ চায় সিকদার গ্রুপ। এই টাকা দিতে অস্বীকার করলে ব্যাংকের এমডিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে এই মাফিয়ারা।
এই ঘটনার ১২ দিন পরে মামলা হলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরপরেই পরই ব্যাংক পাড়াসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলে ব্যাংকের এমডিকে নির্যাতন করা সিকদার গ্রুপের দুই মাফিয়া সরকারের সহায়তায় তাদের নিজস্ব এয়ার এম্বুলেন্সে করে দেশত্যাগ করে।
জানা গেছে, সরকার আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ২৫ মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গ্রুপটির দুই এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে দেশত্যাগ করে।
ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিকদার গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন আরঅ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের মালিকানাধীন বলে নিশ্চিত করেছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল-আহসান। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২৫ মে সকাল ৯টা ১৩ মিনিটের দিকে সরকার অনুমোদিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটটি ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে।
জানা গেছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস। ওই দিনই তাদের অনুমোদন দেওয়া হলে ঢাকায় অবস্থিত থাই দূতাবাসে একটি চিঠি দেওয়া হয়। যেখানে দুই জনকে মেডিকেল ভিসা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। ২৪ মে ভিসা ইস্যু করা হয় এবং পরের দিন (২৫ মে) তারা ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের অশকারায় এতদিন লোপাট করে আসছে দেশের ব্যাংকিং খাত। এখন অন্য একটি শীর্ষ গ্রুপের সাথে নিজেদেরবড়ায়ত্ব করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছেন। পরে উপায় না পেয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশত্যাগ করে এই দুই মাফিয়া। সূত্র বলছেন, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার ভয়ে শেখ হাসিনা লকডাউনের মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকার পরেও দূতাবাস থেকে মেডিকেল ভিসা করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন।
এদিকে দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের ভাইসহ পরিবারের অনেক সদস্যও ক্ষমতাসীনদের সহায়তায় দেশ ত্যাগ করেছেন। জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় উড়োজাহাজ ভাড়া করে যুক্তরাজ্যে গেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী বেক্সিমকো গ্রুপের আরও একজন মাফিয়া সোহেল এফ রহমান। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমানের বড় ভাই।
শুক্রবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে সোহেল এফ রহমান এবং তার স্ত্রী লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমান জানিয়েছেন। এছাড়া আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সালমান এফ রহমানের বেয়াই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানও বৃহস্পতিবার ভাড়া করা একটি বিমানে স্ত্রীসহ দেশ ছাড়া হয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, এম মোরশেদ খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি মামলা আপিল বিভাগে পেন্ডিং। যে মামলায় তাদের সাজা দিয়েছিল বিশেষ আদালত। হাইকোর্ট এ মামলায় খালাস দিলে দুর্নীতি দমন কমিশন আপিল করে। আপিলে লিভ গ্রাণ্ড হয়। এখন মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
তিনি বলেন, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলা পেন্ডিং। যে মামলায় হাইকোর্ট তাকে আদেশ দিয়েছিলেন নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য। উনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। জামিন নিয়ে আদালতকে অবহিত না করে বিদেশ যাওয়া গর্হিত অপরাধ। নিয়মিত আদালত খুললে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হবে।
মানি লন্ডারিং ছাড়াও গত কিছু দিন আগে দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে মোরশেদ খানের হংকংয়ের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। সেটাকে চ্যালেঞ্জ করে মোর্শেদ খান হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করেছেন।
খুরশীদ আলম খান বলেন, এ অবস্থায় আদালতের অনুমতি না নিয়ে সস্ত্রীক বিদেশ চলে যাওয়া সন্দেহের উদ্রেক করে। আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন।
আরও পড়ুন: ক্ষমতাসীনদের আশকারায় বেপরোয়া সিকদার গ্রুপ; ব্যাংক লুটই যেন নেশা