অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনার আক্রমণেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন বাংলাদেশে কথিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তার মৃত্যুতে তার জীবনের অনেকগুলো ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেগুলো পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে দুনিয়া থেকে চলে যেতে হলো। এদেশে ইসলামী রাজনীতি তথা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার জন্য মাঠে-ঘাটে আন্দোলন করেছিলেন আনিসুজ্জামান। বেচারা চলে গেল কিন্তু জামায়াতের রাজনীতি এখনো চলছে। তার ভাষায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা সংস্কৃতি হিজাব-বোরকা পরে এদেশের মেয়েরা এখনও চলাফেরা করে। কিন্তু এই হিজাব-বোরকা নিষিদ্ধে আনিসুজ্জামানের পরিশ্রমের কমতি ছিল না।
আনিসুজ্জামানের জীবনের বড় আফসোস ছিল তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারেন নি। এখানেও তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। কষ্ট করে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার আশা ছিল সরকার সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলাবে। আর তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে মিষ্টি বিতরণ করে উৎসব করবে। কিন্তু তার সেই খায়েশ পূরণ হয়নি। তিনি নিজেই চলে গেলেন।
আনিসুজ্জামানের ধর্মপরিচয় নিয়ে মনে হয় বেশি কথা বলার দরকার নাই। তিনি স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন-১৯৫২ সালের পর ধর্ম বিশ্বাস হারান। আর তিনি ধর্ম না মানার স্বাধীনতাও চেয়েছিলেন। আসলে তিনি কোন ধর্মে বিশ্বাস করতেন সেটা নিজেও জানতেন না। তার কোনো ধর্ম ছিল না। নিজের সুবিধা মতো বিশ্বাস করতেন। তিনি যখন যেখানে যেতেন তখন সেই ধর্মের কথাই বলতেন।
মোট কথা-ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে ধর্মবিদ্বেষীদের অভিভাবক। শুধু তাই নয় তিনি ছিলেন বিভিন্ন দেশের একজন খাঁটি দালাল। তিনি বাস করতেন বাংলাদেশে। খাইতেন বাংলাদেশের খাবার। দালালী করতেন রাশিয়া, ভারত ও আমেরিকার। তবে, দালালির ক্ষেত্রে তিনি ভারতকে প্রাধান্য দিতেন।
আসুন আমরা দেখে নিই আনিসুজ্জামানকে নিয়ে ড. আহমদ শরীফ কি বলেছিলেন। জাগৃতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আহমদ শরীফ-এর ডায়েরি ‘ভাব-বুদ্বুদ’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে-
“আমাদের অজাতশত্রু গুণে-গৌরবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ড. আনিসুজ্জামান কি জাদুকরী নীতি ও আদর্শে একাধারে ও যুগপৎ বিরোধী রাজনীতিক দলের প্রতিবাদী বিবৃতির লেখক ও স্বাক্ষরদাতা, বক্তা হয়েও সরকারের কাজে-কমিটিতে, রেডিও-টিভিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য ও আস্থাভাজন থাকেন। আবার একাধারে ও যুগপৎ মার্কিন ও রাশিয়ার প্রিয় ও আস্থাভাজন থাকেন তা ভেবে পাইনে। তিনিই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনন্য পুরুষ। তার জনপ্রিয়তাও অসামান্য। তার বক্তৃতার কোন শব্দ বা বাক্যই আজো কারো আপত্তির বা অপছন্দের কারণ হয় নি। ড. আনিসুজ্জামান হচ্ছেন পদ্মপত্র বা কচুপাতার মতো চরিত্রের লোক। জলেতে নামবে, কিন্তু গায়ে জল লাগাবে না।”
আহমদ শরীফের এই কথাই প্রমাণ করে আনিসুজ্জামান ছিলেন একজন চরম সুবিধাবাদী ব্যক্তি। স্বার্থ হাসিলের জন্য তিনি যখন যা করার দরকার হতো তাই করতেন। শুধু দালালির কারণে তাকে জাতীয় অধ্যাপকের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মূলত তিনি ছিলেন একজন জাতীয় বেইমান।
এরপর তিনি ছিলেন একজন মিথ্যাবাদী। তার জন্ম কলকাতায় হলেও একসময় খুলনায় জন্ম বলে দাবি করেন। তিনি এক জীবনে দুইবার জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হয়েছেন ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতা শহরের পার্ক সার্কাসে। তার পিতৃভূমি চব্বিশ পরগনা জেলার বাশিরহাট মহকুমার অন্তর্গত মোহাম্মদপুর গ্রামে। তবে সুবিধাবাদী হিসাবে মিথ্যাচারের মাধ্যমে কাগজপত্রে দ্বিতীয় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের খুলনায়। এমন মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ১৯৫৫ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। তিনি নিজের মুখে আদালতে স্বীকার করেছেন। তার পরিস্কার অর্থ তিনি যেখানে যেমন সুবিধা সেখানে সেভাবে পরিচয় দেন।
আসুন, ট্রাইব্যুনালে তার একটি জেরায় চোখ বুলিয়ে আসি। জেরার বিবরণ নিম্নরূপ :
প্রশ্ন : আপনি সুস্থ আছেন?
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন ভারতের কলকাতায় আপনার জন্ম।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন কোন জেলায় আপনার জন্ম?
উত্তর : কলকাতা শহরে।
প্রশ্ন : কলকাতার কোন এলাকায় আপনার জন্ম।
উত্তর : পার্ক সার্কাস।
প্রশ্ন : আপনার ২ কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে আপনি ভারতে গিয়েছিলেন।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আপনার বইয়ের কথা বলেছেন।
উত্তর : জি, আমি বলেছি এ সম্পর্কে আমার বইয়ে কিছু কথা লেখা আছে। বইয়ের নাম ‘আমার একাত্তর।’
প্রশ্ন : আপনার জন্ম কলকাতায় নয়?
উত্তর : না, আমার জন্ম কলকতায়।
প্রশ্ন : আপনার প্রয়োজন অনুসারে আপনি আপনার জন্ম তারিখ ও স্থান বিভিন্ন সময় একেক জায়গায় একেক রকম লিখেছেন।
উত্তর : আমার জন্মস্থান খুলনার বলে একটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে আইনগতভাবে তা সংশোধন করা হয়েছে।
প্রশ্ন : আইনগতভাবে কখন আপনি জন্মস্থান খুলনা পরিবর্তন করে কলকাতা করেন?
উত্তর : ১৯৯৬ সালে।
প্রশ্ন : কিভাবে সংশোধন করেন?
উত্তর : ১৯৫৫ সালে পাসপোর্ট করার সময় যা ছিল তার পরিবর্তে ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি জন্মস্থান সংশোধনের জন্য। মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় জন্মস্থান সংশোধন করে খুলনার পরিবর্তে কলকাতা লেখার জন্য।
প্রশ্ন : ১৯৫৫ সালে আপনি যখন পাসপোর্টের জন্য দরখাস্ত করেন তখন আপনি নিজেই দরখাস্ত করে বলেছিলেন আপনার জন্মস্থান খুলনা।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে আপনার সন্তান ও স্ত্রী একেক সময় একেক মন্তব্য করেছেন।
উত্তর : যখন প্রয়োজন রয়েছে ফবঢ়বহফবহঃ হিসেবে সেখানেই বলেছি খুলনার কথা। অন্যত্র বলি নাই।
প্রশ্ন : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় আপনিসহ আপনার পরিবার ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে আসেন।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : ভারতে আপনার পরিবার কলকাতার পার্ক সার্কাসে থাকতেন। সেখানে কি আপনাদের কোন সম্পত্তি ছিল?
উত্তর : না, ভাড়া বাড়িতে থাকতাম।
প্রশ্ন : ভারতে ঐ সময় আপনার কোন ল্যান্ড প্রাপার্টি ছিল?
উত্তর : গ্রামের বাড়ি চবিবশ পরগনা জেলার বাশিরহাট মহকুমার অন্তগর্ত মোহাম্মদপুর গ্রামে আমার পৈতৃক সম্পত্তি ছিল।
প্রশ্ন : আপনার বাবা চবিবশ পরগানা জেলার মোহাম্মদপুরে কোন পৈতৃক সম্পত্তি পাননি।
উত্তর : যারা বাড়িতে ছিল তারা পেয়েছে। আমার বাবা কলকাতার পার্ক সার্কাসে থাকতেন।
প্রশ্ন : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর আপনার পরিবার ধর্মনিপেক্ষ ভারত ছেড়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানে কেন এলেন?
এই প্রশ্নও যাবে না বলে রুলিং দেন আদালত।