অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবারও মিথ্যাচার করে ধরা খেলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। নারী কেলেঙ্কারি, লেখা চুরি, ইতিহাস বিকৃতিসহ নানা অপকর্মের কারনে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত হয়েছেন আওয়ামী ভাঁড় খ্যাত এই জাফর ইকবাল।
এবার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন প্রাক্ষাপট নিয়ে মিথ্যাচার করে আবারও ধরা খেলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা আ ল ম ফজলুর রহমান এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মিথ্যাচারের দিক গুলো তুলে ধরেন।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে ‘ডিসেম্বরের স্মৃতি’ শিরোনামে একটি মতামত লেখেন জাফর ইকবাল। সেখানে উল্লেখ করেন, যুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে আমি যাত্রবাড়ীতে একটা পরিবারের সাথে ছিলাম, সেই পরিবারে অনেকগুলো শিশু বাচ্চা। যখন যুদ্ধ পুরো মাত্রায় চলছে তখন একেবারে কানের কাছে গোলাগুলির শব্দ, শেলিংয়ের শব্দ। বাইরে কারফিউ কোথাও যাবার উপায় নেই। তখন বাসার সামনে একটি ট্রেঞ্চ কাটা হলো। যখন শেলিংয়ের শব্দ অসহ্য মনে হয় তখন বাচ্চাগুলোকে নিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ট্রেঞ্চে বসে থাকি।
কিন্তু বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এমন কিছুই হয়নি। ঢাকা শহর দখলের এমন কোনও যুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়নাই।
মুক্তিযোদ্ধা আ ল ম ফজলুর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা একদিন সবাই মরে যাবো। তখন ড. জাফর ইকবালের এই লেখার প্রতিবাদ করার কেউ থাকবেনা। সেই সময় অনেকেই তার কথাকে বিশ্বাস করবে। আমি একজন জীবিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জানি ১৯৭১ সালে ঢাকা শহর দখলের কোনো যুদ্ধ হয়নি। দুই নম্বর সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধার ঢাকা শহরে অপারেশন করতো। তা ছিলো একেবারেই চোরা গোপ্তা এ্যাকশন। এই যে তিনি বলছেন কানের কাছে গোলাগুলির শব্দ, শেলিং এর অসহ্য শব্দ যার হাত থেকে বাঁচতে তিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে ট্রেঞ্চে আশ্রয় নিতেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঢাকা শহর দখলের এমন কোনও যুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়নাই।
এছাড়া এই লেখাতে তিনি জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে মিথ্যাচার করেন।
বিভিন্ন সময় দেখাগেছে, জাফর ইকবাল যেভাবে লেখা শুরু করেন প্রথমে সবকিছুর আগে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আসেন, আবেগ ভরে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান, মানুষের দেশপ্রেমের ফাপা বেলুন ভরেন মিথ্যা গর্ব দিয়ে। অর্ধেক ইতিহাস বয়ান করেন। এরপর তিনি দেখান কিভাবে কিভাবে পাকিস্তান খারাপ (সাথে পাকিস্তান চাওয়া মুসলমানরা খারাপ)।
জাফর ইকবালকে বাচ্চাদের বাচ্চা বুদ্ধিজীবি হিসেবে সম্বোধন করেন। তিনি কখনো পাকিস্তান জন্মের আগে ভারতীয় উপমহাদেশের রিয়ালিটি নিয়ে কথা বলেন না। তার সব কথা শুরু হয় ১৯৪৭ থেকে, যেখানে মুসলমানরা সব হিন্দুদের মেরে সাফ করে দিয়েছিলো সেখান থেকে শুরু হয় ইতিহাস। এইপর তিনি শেখ মুজিবর রহমান কতবড়ো নেতা ছিলেন যে শহীদ সোহরাওয়ার্দি, ফজলুল হকদের সাথে আন্দোলনেও তাকে শামিল করান। মূলত সে সময় শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন ছোটখাট নেতা। আর শেখ মুজিবর রহমান যে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য আন্দোলন করেছেন সে ইতিহাসটুকু ভুলে যান তিনি।
পাকিস্তান-ভারতের জন্মের সময়কার ইতিহাস, ব্রিটিশবিরোধী বয়ান কখনো চেতনাপন্থী বা জাফর ইকবাল বয়ান করেন না। কারণ সংখ্যালঘুদের রাজনীতির কথা বললেও তারা মুলত ভারতের নিজস্ব ন্যারেটিভ – হিন্দুত্ববাদী ন্যারেটিভ বয়ান করে।
জাফর ইকবাল কখনো হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের ভালো চাইতে পারেন না, কারন খন্ডিত ইতিহাস যারা বলে তারা আসলে একটা নির্দিষ্ট মতবাদের গোলাম। মুসলমানরা যে উপমহাদেশে সংখ্যালঘূ ছিলো, তারা যে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলো, জিন্নাহ যে প্রধানমন্ত্রীত্ব আর মুসলমানদের জন্য অটোনমি চেয়েছিলো, নেহেরু আর কংগ্রেস নেতাদের কারণেই যে দ্বিজাতিতত্ত্বের জন্ম হয় সেটা তারা কখনো উল্লেখ করেন না।
এছাড়া বিদেশি কাহিনীর অনুকরনে, ছায়া অবলম্বনে বই লিখে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া, কাছে আসা ছাত্রীদের যৌন হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জাফর ইকবালের এহেন কর্মকান্ড নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা চলছে অনেক আগে থেকেই। বিশেষত মেয়েদের সাথে অনেক অপত্তিকর ভঙ্গির ছবি ফেসবুকে অহরহ পাওয়া যায়। বিতর্কিত এই সেলফি তোলার ব্যাপারে তার বিশেষ আগ্রহ ও ইতিহাস মিথ্যাচার কারার কথা বেশ পুরনোই।