অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে করোনার শুরু থেকেই অ্যানালাইসিস বিডির একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, করোনাকে পুঁজি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল ও বিভিন্ন সংস্থার সস্তা বাহ বাহ নেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রথম দিকে ইচ্ছে করেই সরকার করোনা আক্রান্তদের টেস্ট্ করেনি। কিছু টেস্ট করলেও এদের বেশিরভাগ রিপোর্ট দেখানো হয়েছে নেগেটিভ। প্রথম ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী সনাক্ত হয়। আর সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম মৃত্যু দেখানো হয় ১৮ মার্চ। সরকারি হিসাবে ১০ দিনে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। আর আক্রান্তের সংখ্যাও দেখানো হয়েছে খুব কম।
অথচ, ৮ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত করোনার উপসর্গ নিয়ে দেশে কমপক্ষে ১০০ নারী-পুরুষ ও শিশু মারা গেছে। মারা যাওয়া লোকগুলো শত আকুতি-মিনতি করেও করোনা টেস্ট করাতে পারেনি। সরকারি হিসেবে তারা কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি।
এরপর করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে যখন সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে তখন সরকার চাপের মুখে করোনা টেস্ট বাড়াতে থাকে। তখন থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি সরকার। চেপে যেতে থাকে করোনায় মুত্যুর সংখ্যা।
সরকারের এসব ভুয়া তথ্যের ভিত্তি করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দালালগুলো শেখ হাসিনার ভুয়শী প্রশংসা করতে থাকে। এসব নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে গর্ব করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৃতের সংখ্যা চাপা দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যার সস্তা বাহ বাহ অর্জনের পর শেখ হাসিনা ও তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যেন আর না বাড়ে। এরপর থেকেই সরকারি হিসাবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে আসছে। মৃতের সংখ্যা ১৫ থেকে ৫ জনে নামিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। আর যারা মারা যাচ্ছে তাদেরকে বলা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত ছিল না। এখানেও শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা চাপা দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসে কয়েকজন সফল নারীদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পেরেছেন।
কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবার্গ-কক্স এই নিবন্ধে নারী নেতৃত্বাধীন আটটি দেশের করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেছেন। এর আগে এক নিবন্ধে জার্মানি, নিউ জিল্যান্ডসহ নারী নেতৃত্বাধীন সাতটি দেশের এই সংকট উত্তরণে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে লিখেছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে নিবন্ধে লেখা হয়েছে, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা-সংকটের সঙ্গে অপরিচিত নয়। তিনি এই সংকট মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম।
দেশটির সবচেয়ে বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে চীন থেকে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। মার্চের শুরুর দিকে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেন এবং জরুরি নয় এমন ব্যবসা-বাণিজ্য অনলাইনে পরিচালনার নির্দেশ দেন। এরপর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং ডিভাইস বসান, যাতে কেউ করোনাভাইরাসের উপসর্গ বহন করছে কি না তা বোঝা যায়। প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের স্ক্রিনিং হয়, যাদের ৩৭ হাজার ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, এগুলো এমন উদ্যোগ যা যুক্তরাজ্য এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
আসলে বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কানাডিয়ান লেখক তার লেখায় শেখ হাসিনাকে যা বলেছেন তা সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এদেশের সবাই জানে প্রথম থেকে শেখ হাসিনা তার পিতার জন্মশত বার্ষিকী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। করোনাকে তিনি তখন গুরুত্ব দেননি। প্রথম থেকে ব্যবস্থা নিলে আজ পরিস্থিতি এমন হতো না। বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে কানাডিয়ান লেখকের তথ্যের কোনো মিল নেই।
তারপর, কানাডিয়ান লেখক উল্লেখ করেছেন যে, বিমানবন্দরে সাড়ে ৬ লাখ মানুষের স্কিনিং হয়। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে স্কিনিং ডিভাইস বসান। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। যে কয়টি বিমানবন্দরে ডিভাইস বসানো হয়েছিল সেগুলো কোনো কাজ করেনি। সবগুলো ছিল অচল ডিভাইস। আর সরকার প্রথম থেকে কোনো প্রবাসীকে স্কিনিং করেনি এবং কোয়ারেন্টাইনেও নেয়নি। প্রবাসীদেরকে যদি প্রথমেই কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হতো তাহলে করোনা আজ সারাদেশে এত ছড়াতে পারেনি।