অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত কয়েক বছর ধরে কথিত উন্নয়নের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন। তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন সারা দুনিয়ার জন্য উন্নয়নের মডেল। বিশেষ করে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছেন বলে জোর গলায় দাবি করে আসছেন। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে কোনো অভাব নেই। চিকিৎসা সেবাকে তিনি মানুষের দৌড় গড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার সাথে কথিত উন্নয়নের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন তার মন্ত্রী ও দলের নেতারা।
কিন্তু, দেশে প্রাণঘাতী করোনা আঘাত করার পরই শেখ হাসিনার কথিত উন্নয়নের মুখোশ উম্মোচন হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতের আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে।
চীনে প্রাণঘাতী করোনা ছড়িয়ে পড়ার পরই দেশের বিশিষ্টজনেরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলো আগাম প্রস্তুতি নিতে। শেখ হাসিনা এসব পাত্তা নাদিয়ে বলে দিলেন দেশে কোনো কিছুর সংকট নেই। উন্নত মানের চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি আছে। সবগুলো হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। স্বাস্থ্যসেবায় কোনো কিছু ঘাটতি নেই।
কিন্তু, প্রাণঘাতী করোনা যখন দেশে ছড়িয়ে পড়লো তখনো দেশের স্বাস্থ্যসেবার আসল রূপ প্রকাশ পেল। রোগীতো অনেক দূরের কথা, ডাক্তার-নার্সদেরকেও সরকার সুরাক্ষা দিতে পারছে না। মানুষের সমালোচনার মুখে কিছু সংখ্যাক ডাক্তারদের জন্য সরকার পিপিই ব্যবস্থা করেছে। এখনো অধিকাংশ হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরাঞ্জামাদি পাননি। যার কারণে, প্রতিদিন সাধারণ মানুষের সঙ্গে ব্যাপকভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে ডাক্তার ও নার্সরা।
তারপর, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দেশের সব জেলায় করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এখন পর্যন্ত সেটাও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আর যেসব হাসপাতালে কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানেও আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটর নেই, পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। কোনো প্রকার সেবা ও চিকিৎসা ছাড়াই করোনায় আক্রান্তরা মারা যাচ্ছে। এমনকি, করোনা আক্রান্তদের জন্য যে কুর্মিটোলা হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নত মানের চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি নেই। লোকজন এখানে এসে ভর্তি হয়েও সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোর অবস্থাতো আরও খারাপ।
এছাড়া, করোনার উপসর্গ ও সাধারণ জ্বর-কাশি নিয়ে প্রতিদিন বিনা চিকিৎসায় নারী-পুরুষ ও শিশুরাতো মারা যাচ্ছেই।
এরপর, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সারাদেশে অঘষিত লকডাউন করে রেখেছে। লকডাউনের প্রায় ১ মাস চলছে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই সারাদেশে খাবারের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। খাবারের জন্য মানুষ বিক্ষোভ করছে। চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে দেশের কর্মহীন মানুষ। তারা এখন খাবারের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের খাদ্য সংকট দূর করতে পারেনি।
দেখে গেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সস্তা বাহ বাহ পাওয়ার জন্য শেখ হাসিনা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। আর দাবি করছেন যে, একটানা তিন বছর তিনি মানুষকে খাদ্য দিতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন, বাস্তবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সেই পরিমাণ অর্থ নেই। টাকার জন্য এখন দেশি-বিদেশি সংস্থার কাছে ধার দেনা শুরু করেছে সরকার। ইতিমধ্যে এডিবির কাছে ডাক্তার-নার্সদের বিশেষ প্রণোদনার জন্য টাকা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। আর গোপনে দেশের বড় বড় কোম্পানি, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, করোনার কারণে বাংলাদেশ বড় ধরণের অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হবে। বাস্তবে সরকারের ফান্ডে কোনো অর্থ নেই। সবই সরকারকে ঋণ করতে হবে। সরকারের লোকজন এতদিন যা বলে আসছে সবই ছিল তাদের চাপাবাজি। করোনয় তাদের মুখশ উন্মোচন করে দিল।