অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশ জুড়ে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যুর মিছিল থেকে বাদ পড়েনি চিকিৎসকও। দেশের মানুষ এক অজানা শঙ্কায় দিন পার করছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছাড়াই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসকরা। পেটের দায়ে ত্রাণের জন্য রাজপথে নামছে সাধারণ মানুষ। তবুও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।
দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে নেই ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রণোদনার নামে চলছে সরকারে অভিনব প্রতারণা। ত্রাণের নামে চলছে চাল, ডাল, তৈল চুরির মহোৎসব। এসব ধামা চাপা দিতে গুজব দমনের নামে নিজেরাই ছড়িয়ে দিচ্ছে গুজব।
সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাহফুজুল হকের ছবি যুক্ত করে একটি ভুয়া ফোনআলাপ তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এই ভিডিওটি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পেজ থেকে শেয়ার করে ভাইরাল করার চেষ্টা করে। এরপর ভিডিওটি কোন প্রকার যাচাই না করে বি.বাড়িয়ার জানাযায় লাখো মানুষের জমায়েত পূর্ব পরিকল্পিত শিরোনামে সময়টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। এরপর তীব্র সমালোচনার মুখে ভিডিওটি সরিয়ে নেয় সময় টিভি।
ঢাকায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার নিরাপত্তার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তাঁরা বলেন, টেলিসংলাপটি শুনেছেন। ‘বানানো’ বলে মনে হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের নির্দেশ পেলে খতিয়ে দেখবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামীলীগ বেকায়দায় পড়লেই ফোনালাপ ফাঁস করে। এটা আওয়ামীলীগের পুরোনো অভ্যাস। চাউলচুরির লজ্জা ঢাকতে জানাযার ইস্যু নিয়ে ঘৃণ্য অপপ্রচারের অংশ হিসেবে আওয়ামী মালিকানাধীন সময়টিভি উঠে পড়ে লেগেছে। জানাযার উপস্থিতি ঠেকানোর দায়িত্ব সরকারের ছিল। সেটাতে ব্যর্থ হয়ে উল্টো জামায়াতকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। অডিওর কোনো কণ্ঠই উল্লিখিত ব্যক্তিদের না সেটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। এটা সুষ্পষ্টভাবে কোনো কাপুরুষ আওয়ামী এজেন্টের কাজ।
ভুয়া ফোনালাপ ফাঁস করে ফায়দা লড়তে চায় সরকার
ফোনালাপ ফাঁস আমওয়ামী সরকারের এক অভিনব প্রতারণা করছে। তারা মূলত ফোনালাপ ফাঁসের আড়ালে নিজেদের ফায়দা লড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। এর আগেও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীনরা বেকায়দায় পড়লে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেন। ইতি পূর্বে ফোনালাপ ফাঁস করে বিরোধী মত দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ফোনালাপ ফাঁসের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালে। এসময় ২৬শে অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের প্রায় ৩৭ মিনিট কথোপকথন হয়। এর একদিন পরই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ওই কথোপকথন সম্প্রচারিত হয়। এ ঘটনার পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
২০১১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে খালেদা জিয়া মোবাইল ফোনে নানা দিকনির্দেশনা দেন। পুরনো ওই ফোনালাপের পাঁচটি অডিও দীর্ঘদিন পর ফাঁস হয় বাংলালিক নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে। ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নামে প্রায় ১০ মিনিটের একটি ভুয়া কথোপকথন তৈরি করে বাংলালিক নামে ইউটিউব চ্যানেলে ছেড়ে দেয়।
ফোনালাপ ফাঁসের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে প্রায় ২৩ মিনিট ফোনে কথা বলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। একই সময় আরেক ব্যক্তির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন তিনি। ফোনালাপে তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তারা। ঘটনার কয়েকদিন পর বানোয়াট একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
২০১৫ সালের ২৮শে এপ্রিল সিটি নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ফোনালাপ ফাঁস করে দেয়া হয়। ওই কথোপকথনে নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার মতামত আছে কিনা শিমুল বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মওদুদ আহমদ। শিমুল বিশ্বাসও হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলেন। একদিন পর তাদের ফোনালাপ ইডেটিং করে ভিন্ন ভাবে ফাঁস করে দেয়।
এরপর ফের ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন মওদুদ আহমদ। গত ৮ই মে দুপুরে ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এরপর তাদের দুই মিনিট ৮ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস করে দেয়া হয়।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, কারও ব্যক্তিগত কথোপকথন জনসম্মুখে অন্যায় সংবিধান পরিপন্থী। সেখানে তারা ভুয়া ফোনালাপ তৈরি করে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। বিরোধী মত দমনে ক্ষমতাসীনরা ফোনালাপ ফাঁসের নামে এক অভিনব প্রতারণা শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা নিজেরাই একদিন নিজেদের জালে ফেঁসে যাবে। এর আগে স্কাইপি, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে যেভাবে ফেঁসেছেন।
মিথ্যা প্রতিবেদনে জামায়াতের নিন্দা
সময়টিভির এই মিথ্যা প্রতিবেদন প্রচার করায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই জাল সংবাদ যারা পরিবেশন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান তারা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ২১ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, ফোনালাপ ফাঁসের কথা বলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এবং মুফতি মাহফুজুল হকের তথাকথিত কথোপকথনের যে কন্ঠ প্রচার করা হয়েছে তা জামায়াতের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের কণ্ঠ নয়।
বিভিন্ন অনলাইন চ্যানেলে আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানের বহু ভিডিও-অডিও বক্তব্য রয়েছে। ঐ সব বক্তব্যের কণ্ঠের সাথে মিলানো হলে যে কেউ বুঝতে সক্ষম হবেন যে, সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত কণ্ঠ আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান-এর নয়।
জামায়াত নেতা বলেন, অন্য লোকের কণ্ঠকে পরিকল্পিতভাবে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের কণ্ঠ বলে প্রচার করে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ও প্রতিবেদক তথ্য আইনের সুস্পষ্ট লংঘন এবং ব্যক্তি ও দলের সম্মান হানি করেছেন। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ জাল সংবাদ তৈরী ও প্রচারের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।
খেলাফত মজলিসের প্রতিবাদ
এই প্রচারের বিরুদ্ধে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, টেলিসংলাপটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং ষড়যন্ত্রের অংশ।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, তাঁর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের ব্যক্তিগত যোগাযোগ নেই। পরিচয়ও নেই। কোনো দিন ফোনে কথা বলেছেন বলেও মনে করতে পারেন না। ইথিকাল হ্যাকিং নামের যে গ্রুপটি ফেসবুকে কথোপকথনের লিঙ্ক প্রকাশ করেছে তারা ঠিকমতো খোঁজখবর না নিয়েই এমন একটি ভুয়া অডিও রেকর্ড তৈরি করেছে বলে মনে করেন তিনি।
মাহফুজুল হক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, অডিও ক্লিপ যারা প্রচার করেছে, তাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, নইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।