কফিশপগুলোয় মানুষের ভিড় দেখলেই বোঝা যায় দিন দিন বাড়ছে এই পানীয়ের জনপ্রিয়তা। যাঁরা কফির সমঝদার, তাঁদের কাছে দিনদুনিয়া উদ্ধার করে হলেও এক পেয়ালা কফি কোনো না কোনোভাবে চাই–ই। আজ তেমনই কফিপ্রেমী অথবা উঠতি কফিপ্রেমীদের জন্য থাকছে কিছু রেসিপি, যেন খুব ঝোঁক চাপলে আর কফিশপের খোঁজে ছুটতে না হয়। যাতে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলা যায় পছন্দের কফি, পান করতে করতে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখও রক্ষা করা যাবে। কফি তৈরির রেসিপিগুলো জানিয়েছেন রান্নাবিদ আফরোজা নাজনীন।
আইসড কফি
বসন্ত শুরুর মধ্য দিয়ে শীত এ বছরের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিল। তাই ঠান্ডা পানি খেলেও আর গা শিউরে উঠবে না। কফিতেও এখন আর ‘গরম–গরম’ ভাব না থাকলেও চলবে। এসে গেছে বরফঠান্ডা কফির মৌসুম। তাই শুরুটাই হোক আইসড কফি দিয়ে।
আইসড কফি বানানোর জন্য লাগবে ৩ কাপ ফুটন্ত গরম পানি। ফুটে ওঠা পানিতে মেশাতে হবে ৬ চা–চামচ ইনস্ট্যান্ট কফি। গরম কফিতে এরপর যোগ হবে ৪ টেবিল চামচ কনডেন্সড মিল্ক আর ৪ টেবিল চামচ ফ্রেশ ক্রিম। এখন এই গরম কফিকে ঠান্ডা করার পালা। বরফভর্তি জারে কফি ঢেলে রাখুন। আর গ্লাসের ভেতরে ১ টেবিল চামচ চকলেট সিরাপ দিয়ে ওপর থেকে ঠান্ডা কফি ঢেলে পরিবেশন করুন। গরমে আরাম এনে দেবে এই বরফঠান্ডা কফি।
দোকানে দোকানে এই ক্যারামেল মোহিতো ফ্র্যাপের বেশ কদর। কিন্তু দোকানে মেনুতে যে দাম লেখা থাকে, তা দেখে অনেকেই আর সাহস করে এগোতে পারেন না। তাই সাহস করে এই ক্যারামেল মোহিতো ফ্র্যাপে বানানোর দায়িত্ব নিজ হাতেই তুলে নিন।
যে পরিমাণ দাম লেখা থাকে কফিশপের মেনুকার্ডে, বাড়িতে বানাতে গিয়ে দেখবেন, এ তো তেমন আহামরি কোনো বিষয়ই না। সত্যিই তা–ই। মাত্র ১ টেবিল চামচ গরম পানি লাগবে। আর তাতে মেশাতে হবে ১ চা–চামচ ইনস্ট্যান্ট কফি। ভাবছেন এক চামচ পানিতে এক চামচ কফি দিয়ে মনের তেষ্টা মিটবে কেমন করে? তাঁদের জন্য বলে রাখি, এই দুইয়ের সঙ্গে এরপরে ব্লেন্ডারে মেশাতে হবে ১/৩ কাপ চকলেট মিল্ক। দুধে, চকলেটে, কফিতে যত মিশবে, স্বাদও ততই বাড়বে। স্বাদের মাত্রায় মিষ্টি ছড়িয়ে দিন তাতে ১ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে। এবার আসে সুঘ্রাণের পালা। এ জন্য কফিতে মেশান ভ্যানিলা এসেন্স, পরিমাণ ১/৪ চা–চামচ। সবই কিন্তু ব্লেন্ডারেই মেশাতে হবে। তারপর আসে পরিবেশন–পর্ব। পরিবেশনজারে বরফ নিন। গ্লাসের ভেতর কফি–বরফ ঢেলে তার ওপর হুইপড ক্রিম বসিয়ে দিন। আর ক্যারামেল মোহিতো ফ্র্যাপের নাম রক্ষা করার জন্য সবশেষে ক্রিমের ওপর ২ টেবিল চামচ ক্যারামেল ছড়িয়ে দিন।
ক্যাপাচিনো
প্রতিটা কফিশপের জনপ্রিয়তম আইটেম ক্যাপাচিনো। এই এক কাপ ক্যাপাচিনো যেমন মন–মস্তিষ্ককে সজাগ করে, তেমন ক্যাফেইনপ্রেমী হিসেবেও আপনার হাবভাবকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু শীত তো গেছে, এখন জ্যাম–ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে কফিশপে যাওয়ার ঝক্কি নিতে হয়তো সব সময় মন চাইবে না। তাই বাড়িতেই দোকানের মতো ক্যাপাচিনো বানানোর কায়দাটা শিখে নিন।
ক্যাপাচিনোতেও লাগে মাত্র ২ টেবিল চামচ গরম পানি। এর সঙ্গে ১ চা–চামচ ইনস্ট্যান্ট কফি। চিনিতে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁরা ১ চা–চামচ চিনি নিয়ে নিন। ক্যাপাচিনোর স্বাদ বাড়ে এর ফেটানোতে। যত দারুণভাবে কফি, চিনি আর গরম পানি দিয়ে ফেটা হবে, ততই আনন্দ পাবে আপনার স্বাদগ্রন্থি, কফিতেও আসবে দারুণ রং। মিশ্রণ ভালোভাবে মেশাতে পারলে দেখবেন দোকানও হার মানবে বাড়ির ক্যাপাচিনোর সামনে। ক্যাপাচিনো ফুলেফেঁপে উঠবে ফোমে।
ভালোভাবে ফেটতে ফেটতে যখন হাত ধরে আসবে, তখন একটু বিশ্রাম নিয়ে ১ কাপ দুধ বৈদ্যুতিক কফি মেকারে ২–৩ মিনিট গরম করে নিন। গরম দুধটুকু একটি তাপনিয়ন্ত্রক কাচের বোতলে ভরে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন। এটা করতে করতেও যখন হাত ধরে আসবে, বুঝবেন এটাও তৈরি ফোমে ভরপুর ক্যাপাচিনো তৈরির জন্য। এবার হাতকে বিশ্রাম দিয়ে আস্তে আস্তে একটু ওপর থেকে আগে ফেটানো কফির মগে গরম দুধ ঢালুন। ঢালার পরই বুঝতে পারেন বোতল ঝাঁকানোয় কতটা সফল আপনি। যত বেশি ফোম, ততটাই সফল। এবার কফির ওপরের অংশে ছাঁকনি দিয়ে একটু শুকনা কফির গুঁড়া ছড়িয়ে দিন, আর গরম–গরম সার্ভ করুন ক্যাপাচিনো।
যাদের কাছে মনে হয় দুধে, ক্রিমে কিংবা চকলেটের ভিড়ে হারিয়ে যায় কফির আসল স্বাদ, তাঁরা বাড়িতেই চেষ্টা করতে পারেন ব্ল্যাক কফি। এর জন্য লাগবে এক কাপ পানি, আধা চা–চামচ কফি আর বাদামি চিনি ১ চা–চামচ। এই তিনে এক সঙ্গে মিলিয়ে কফির কড়া স্বাদ দিয়ে দিনকে করে তুলুন চাঙা আর ফুরফুরে।