অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রণঘাতী করোনায় মানুষের মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। গত মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনা উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম থেকেই চাপা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি মিথ্যাচার করতে গিয়ে তথ্যের গরমিলও দেখা গেছে। এছাড়া শুরু থেকে অভিযোগ রয়েছে করোনা পরীক্ষা ও যথাযথ সেবা নিয়ে। অন্যদিকে করোনা পরীক্ষার জন্য রয়েছে ওপর মহলের চাপ।
অ্যনালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে বাংলাদেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ জনের মৃত্যু হচ্ছে এবং আক্রান্ত হচ্ছে অর্ধশাতাধিক। এছাড়া এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ। দেখা গেছে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী শুধুমাত্র গতকাল বুধবার ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকাট্রিবিউনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত ১১ মার্চ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে কর্মরত এক আনসার সদস্যের করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়। জানা যায়, ৪ মার্চ ঠাণ্ডা ও জ্বরের কারণে ছুটি নিয়ে রংপুরে বাড়িতে যায় তিনি। এরপর ১১ মার্চ তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কান্সিলের আনসার সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথম আলোর তথ্যমতে ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার আরও একজনের মৃত্যু হয়। সূত্র বলছে, বাগেরহাটের মংলা উপজেলার এক ব্যক্তি ৫-৬ দিন জ্বর-শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধে কাজ না হলে খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। রোগীর মধ্যে করোনার উপসর্গ শুনেই চিকিৎসকরা ভয় পেয়ে যান। পরে চিকিৎসা দিতে কেউ এগিয়ে না আসলে একপর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া একই দিনে নড়াইল থেকে খুলনায় যাওয়ার পথে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে সপরিবারে ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তারা। এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে বাড়িতে ফেরেন। এরপরই জ্বর, গলাব্যথা, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয়ভাবে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। পরে খুলনায় আনার পথে তার মৃত্যু হয়। একই দিনে চট্টগ্রামে কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়। জানা যায়, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেসরকারি ‘রয়েল হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডে’ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালটির আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হয় এবং যে চিকিৎসক ওই রোগীকে সেবা দেন তাকেও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়।
এরপর ২২ মার্চ। মিরপুরের টোলারবাগে কোভিড-১৯ এ মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা, পাশের বাসায় বাস করা এই ব্যক্তি দুদিন ধরে ওই ব্যক্তির দুদিন ধরে কাশি হচ্ছিল, খাওয়ার রুচি চলে গিয়েছিল। শনিবার (২১ মার্চ) কুর্মিটোলায় নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপরে রোববারে শ্বাসকষ্টে অচেতন হয়ে গেলে, কুর্মিটোলায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে এম্বুলেন্স ডাকা হয়। লক্ষণ শুনে এম্বুলেন্সচালক ভয় পেয়ে রোগী বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে অন্য এম্বুলেন্সে কুর্মিটোলা নিয়ে যাওয়ার সময়ে পথেই মারা যান। রোববার সকালে আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়, কিন্তু পরীক্ষার ফল মিডিয়াতে পাইনি। একই দিনে ভৈরবের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি ইতালি থেকে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। এরপর ২১ মার্চ থেকে ওই ব্যক্তি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে রাত নয়টার দিকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর চিকিৎসকেরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের তাঁকে ওই হাসপাতাল থেকে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরমর্শ দেন। পরে ওই হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানের চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মারা যাওয়ার পরে নমুনা সংগ্রহের জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) জানানো হলে তারা অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া একই দিনে সিলেটে আইসোলেশনে থাকা অবস্থাতেই এক নারীর মৃত্যু হয়।
জামালপুরের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয় গত ২৪ই মার্চ। ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২১ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন ওই বৃদ্ধা। তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। এরপর মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে তিনি মারা যান। এরপর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়। জানা যায়, তার বাবার বাসায় অসুস্থ মায়ের সেবার কাজ করছিলেন ওই নারী। এক সপ্তাহ আগে তার মা জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে মারা যান। এরপ তারও জ্বর, সর্দি, কাশি হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে রাখেনি। সন্ধ্যায় বাবার বাড়িতে না নিয়ে তাকে নিজ বাড়িতে আনা হয়। বাড়িতে আনার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া গত ২৪ মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতলের কর্মচারীর মৃত্যু হয়। জানা যায়, ওই ব্যক্তি হাসপাতালের ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করতেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে তার কর্মস্থল থেকে তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর ২৪ মার্চ দুপুরের পর থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে। একই দিনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ এর যাবতীয় লক্ষণ নিয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক ব্যক্তি। জানা যায়, ২০ মার্চ তারিখে তিনি জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন, অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ২২ মার্চ আইসিইউতে নেয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে তিনি মারা যান। এছাড়া সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। জানা যায়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন তার ছেলে। গত ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে তার ছেলে দেশে ফেরেন এবং পরদিন থেকেই গিয়াসউদ্দিনের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বাবাকে নিয়ে সিলেট কিডনী ফাউন্ডেশনে যান তার প্রবাসী ছেলে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিস্তারিত শুনে গিয়াস উদ্দিনকে কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেন। হোম কোয়রেন্টিনে থাকা অবস্থাতেই মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাত ৯ টায় তিনি মারা যান।
গত ২৫ মার্চ ডেইলি স্টারের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী খাগড়াছড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে ত্রিপুরা জাতির এক তরুণসহ দুইজনের মৃত্যু হয়। এদিকে ২৬ মার্চ করোনায় আক্রান্ত রোগীর পাশের বেডে থাকা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে। জানা যায়, ঢাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে একই হাসপাতালের আইসিইউতে পাশাপাশি বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন এক ব্যক্তি। সে ঘটনার পরে ওই হাসপাতাল থেকে সব রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং নিজ নিজ বাসায় সবাইকে কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলে থাইরয়েড সার্জারির এই রোগীও খুলনায় চলে আসেন। কিন্তু বুধবার (২৫ মার্চ) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে তিনি থাইরয়েড সার্জারিতে ইনফেকশন নিয়ে ভর্তি হন। ঢাকায় করোনা রোগীর সংস্পর্শে তথ্য গোপন করে ভর্তি হলেও, বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে তার করোনার লক্ষণ শুরু হয়, তার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। এরপরে, গোপন করা তথ্য প্রকাশ পেলে তাকে সার্জারি ইউনিট-২ থেকে সরিয়ে ফাঁকা একটি ওয়ার্ডের এক কোণে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছিল এবং দুপুর দেড়টার দিকে মারা যান। এরপর ২৭ মার্চ শিবগঞ্জে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, কর্মস্থান গাজীপুর থেকে অসুস্থতার কারনে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যায়। এরপর ২৭ মার্চ শুক্রবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হয়। অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্ত্রী প্রথমে পাড়া–প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চান। ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কেউ এগিয়ে আসেননি। এরপর স্ত্রী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন জেলা ও উপজেলার হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশে। কিন্তু সারা রাতে কোথাও থেকে তিনি কোনো সাড়া পাননি। তিনি রাতে আইইডিসিআর হটলাইনে ফোন দিয়ে কাউকে পাননি। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হটলাইনে ফোন করেও সাড়া পাননি। পরে সকালে তার মৃত্যু হয়। ওই নারী বলেন, ‘দেখছি’ বলার বেশি কেউ কিছু করেননি। ছোট একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরে নিস্তেজ মানুষটার পাশে বসে আছেন—জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেঁচে আছে, না মরে গেছে, বুঝতে পারছি না। কী করব বুঝতে পারছি না। করোনাভাইরাসের ভয়ে কেউ তো কাছে আসছেন না।’
গত ২৭ মার্চ নোয়াখালির একজনের মৃত্যু হয়। নোয়াখালির বেগমগঞ্জের ওই ব্যক্তি ঢাকার একটি হাসপাতালে এক ডাক্তারের সহকারি হিসেবে কাজ করতো। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি তিনি জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর ও কাশি নিয়ে নোয়াখালি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মারা যান। এছাড়া বগুড়ার শিবপুরে আরও এই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
২৮ মার্চ করোনার উপসর্গ নিয়ে লালমনিরহাটের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। জানা যায়, ওই ব্যক্তি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। গত ৭-৮ দিন আগে জ্বর, সর্দ্দি ও কাশি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে জ্বর, সর্দ্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে চিকিৎসাপত্র গ্রহণ করেন। ২৮ মার্চ দুপুরে তিনি মারা যান। এরপর বগুড়ায় করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। একই দিনে চাঁদপুরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। কালের কন্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকদিন আগে নারায়নগঞ্জে তার কর্মস্থলে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হন। প্রথমে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তার স্ত্রী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বামীকে। ২৬ তারিখে ভর্তির দুদিনের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। একই দিনে বরিশাল ও ভোলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে এক নারীসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো। এছাড়া একই দিনে নওগাঁয় এক তরুণের মৃত্যু হয়।
বাংলা ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়, নওগাঁর এক তরুণ ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে জ্বর আর কাশি নিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁয় যায়। শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার সময় করোনা আক্রান্ত হয়েছে সন্দেহে মেম্বার ও গ্রামের লোকজন তাকে আসতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে এলাকার ভেটি স্ট্যান্ড থেকে চিকিৎসার জন্য আদমদীঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার চিকিৎসা না করেই ফিরিয়ে দেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে পরে তার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য প্রথমে রাণীনগর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা দেখেই হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়। নওগাঁ হাসপাতালে পৌঁছার পর সেখানেও ভালোভাবে না দেখে রাজশাহী নিয়ে যেতে বলে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। এরপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে তার জ্বর কোনোভাবেই কমছিল না। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৮ মার্চ) রাতে তার মৃত্যু হয়। এরপর পটুয়াখালী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
মানিকগঞ্জের এই নারীর শ্বশুর এক সপ্তাহ আগে মারা যান। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন, যেখানে অনেক লোক সমাগম হয়েছিল। এরপরে গত সাত দিন ধরে তিনি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। দুই দিন ধরে তার পাতলা পায়খানা ছিল। রোববার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং তাদের নিকটতম প্রতিবেশীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে নিহত ওই ব্যক্তির পুরো গ্রামকেই লকডাউন করা হয়।
এরপরদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এক নারীর মৃত্যু হয়। জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অল্প অল্প অসুস্থ ছিলেন। তাই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। আইইডিসিআরকে জানানো হলে রোববার (২৯ মার্চ) সকালে তার মোহাম্মদপুরের বাসায় এসে নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেই পরীক্ষার ফল আসেনি। ওই নারীর মৃত্যুর পর মোহাম্মাদপুরের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়। একই দিনে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার এক বৃদ্ধার আইসোলেশন থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এক নারীর জ্বর,কাশি, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যু হয়। একই দিনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এছাড়া দিনাজপুরের বিরামপুরের এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়। জানা যায়, মৃত্যুর ১০/১২ দিন আগে কুমিল্লার কর্মস্থল থেকে ঠাণ্ডা ও জ্বর নিয়ে বাড়িতে ফিরেন। কুমিল্লায় যে বাড়িতে তিনি কাজ করতেন, তার মালিক একজন সৌদি প্রবাসী যিনি সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। প্রশাসন ঐ বাড়ির সবাইকে কোয়ারেন্টাইন রেখেছিলো, কিন্তু এই দিনমজুর সেখান থেকে পালিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং জন্ডিসও দেখা দেয়। সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তির পরিবারের ৪ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। একই দিনে যশোরে ১২ বছর বয়সী এক শিশুর আইসোলেশন থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়।
এর একদিন পর কুষ্টিয়ার এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তি পেশায় ইজিবাইকচালক ছিলেন। শহরের চৌড়হাস এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত শুক্রবার (২৭ মার্চ) তাঁর সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়। একই দিনে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ঢাকার কামরঙ্গিচরে যথাক্রমে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা ট্রিবিউন, বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর, নিউজ টোয়েন্টিফোর, ভোরের কাগজ।
আরও পড়ুন:
করোনা চাপা দিতে চীনের মতো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে হাসিনা!
বহির্বিশ্বের প্রশংসা পেতে করোনার তথ্য গোপন করছে সরকার!
করোনা উপসর্গ নিয়ে একদিনেই ৮ মৃত্যু, সরকার বলছে আক্রান্তই হয়নি
করোনা প্রস্তুতি শূন্যের কোটায়, চাপা দিতে তথ্য গোপন