অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। সারাদেশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মানুষ বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। এ অবস্থায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালকরা। কোনো প্রকার কাজ কর্ম না থাকায় তারা এখন নিরুপায় হয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে উপবাসে দিন কাটাচ্ছেন।
বলা যায় সারাদেশে এখন লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের ঘরে হাহাকার চলছে। অনেকে কাজের জন্য বের হয়ে কোনো কাজ না পেয়ে রাস্তায় বসে কাঁদছেন। আর কোনো কোনো জায়গায় রিকশা চালকরা যাত্রী না পেয়ে রিকশায় বসে কাঁদছে। এমনি এক ঘটনা ঘটেছে রোববার রাজশাহীতে।
দেখা গেছে, রাজশাহী শহরে ঘরে চাল-ডালের ব্যবস্থা না থাকায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছিল সুমি নামে এক নারী। কিন্তু যাত্রী না পেয়ে রিকশায় বসেই কাঁদেন রিকশা চালক সুমি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, সারাদেশে সুমির মতো আরও শত দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষ কাজ না পেয়ে রাস্তার পাশে বসে কাঁদছে।
রাজধানীর ভাষানটেক দুই নম্বর বস্তির বাসিন্দা আনারকলি। তার স্বামী আবুল কাশেম হিউম্যান হলার চালক। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। পুরো পরিবার বাস করে আনুমানিক ৮০ বর্গফুটের একটি বেড়ার ঘরে।
আজ রোববার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, আনারকলির ঘরের ভিতরে কয়েকজন জটলা করে বসে আছে। বসে থাকতে দেখে জানতে চাইলাম, আপনাদের করোনাভাইরাসের ভয় নেই? তাদের তাৎক্ষণিক উত্তর—ভয় তো আছেই, কিন্তু ঘরে তো আর জায়গা নেই, কোথায় যাব। ঘরে খাবার নেই, বাইরেও কাজ নেই। করোনা ভয় থাকলেও তাই কিছুই করার নেই।
আনারকলি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বস্তিতে যারা থাকে তাদের অনেকের গ্রামে বাড়ি-ঘর আছে। তারা গ্রামে চলে গেছে। আমরা তো গরিব। আমাদের ঘর-বাড়ি কিছুই নেই। তাই বস্তিতেই পড়ে আছি।
এখন বেশিরভাগ বস্তিবাসী অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে জানান তারা। করোনা আতঙ্কে এই বস্তির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছে। আর যারা আছে তারা কর্মহীন। ঘরে বসে তাদের অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
কড়াইলের ১ নম্বর ইউনিটের উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুস সোবাহান জানান, কিছু এনজিও ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনা সেটা অপর্যাপ্ত।
অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এসব দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের খাবারের ব্যবস্থা না করে অন্য রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার গণভবনে সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের খাদ্যে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আমাদের চালাতে পারব, পাশাপাশি আমরা অনেককে সহযোগিতা করতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বন্ধুপ্রতীম দেশ, যারা সহযোগিতা চেয়েছে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারব। সেই সক্ষমতা আমাদের আছে। মানবিক কারণেই আমরা সেটা করব। শুধু নিজের দেশই নয়, অন্যদেরও যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় আমরা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন অসহায় দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে খাবার উপকরণ বিতরণ করছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সচেতন মহল বলছেন, নিজের দেশের অসহায় মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা না করে শেখ হাসিনা পাগল হয়ে গেছে কৃতিত্ব অর্জনের জন্য। তিনি নিজের কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশকে বিক্রি করে দিতেও রাজি।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার এই উচ্চ বিলাসিতাই দেশকে আরও ভয়াবহ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।দেশের মানুষ খাবার পাচ্ছে না আর শেখ হাসিনা অন্য রাষ্ট্রকে খাদ্য সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটা এদেশের অসহায় ও শ্রমজীবীর মানুষের সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়।