অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রণঘাতী করোনায় থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজারের অধিক। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি রাষ্ট্রে।ইতিমধ্যে ভারত ও বাংলঅদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। ভারতে এ পর্যন্ত ৭১৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জন। এরপরেই লকডাউন করে দেয় পুরো ভারত। এই অবস্থায় গরিবদের বাঁচাতে এগিয়ে এল ভারত সরকার।
করোনায় লকডাউনের সময়ে গরিবরা যাতে অভুক্ত না থাকেন সে জন্য আগামী তিন মাস ধরে ভারতে প্রতিটি গরিব পরিবার বিনা পয়সায় পাঁচ কেজি করে চাল ও এক কেজি ডাল দেবে বলে ঘোষনা দিয়েছে মোদি সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারি ভবে মাত্র ৫ জন দেখানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সারাদেশে কয়েকশ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে ইতিমধ্যে অঘোষিত লকডাউন করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু গরিবদের কি হবে? তা নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ক্ষমতাসীনরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মোদি সরকার গরিবদের খাওয়াতে পারলে তার চেয়ে দ্বিগুণ বড় বাজেটের দেশ বাংলাদেশে কেন তা করা যাবে না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনী অধ্যপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিলে এগিয়ে আসবে সবাই।
‘‘প্রয়োজনে আমরা সবাই এগিয়ে আসব। আমরা ঢাবির শিক্ষকেরা দুদিনের বেতন দান করলে তা হয় কোটি টাকার বেশি। দুদিন কেন, প্রয়োজনে আমি আমার এক মাসের বেতন দিতে রাজি আছি। এ সমাজে আমার চেয়ে অনেক বড় মনের মানুষও আছে বহু। এ সমাজে বড় বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আছে। আছেন বিত্তশালী গার্মেন্টস মালিকেরা। সবাই মিলে হতদরিদ্র এক কোটি পরিবারকে এক মাস খাওয়াতে পারব না আমরা? নিশ্চয়ই পার’’।
প্রথম আলোতে ‘এখনই আসুক লকডাউন’ শিরোনামে প্রকাশিত মতামতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছা থাকলে গরিবদের তিন মাস কেন পুরো বছর খাওয়ানো সম্ভব। সম্প্রতি ভারতের মন রক্ষার জন্য সার্ক তহবিলে ১.৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিছে সরকার। তাহলে বাংলাদেশের গরিবদের খাওয়াতে পারবে না কেন? শুধুমাত্র সুষ্ঠ বন্টন, সরকারি সদিচ্ছা ও বিত্তশালীদের অংশ গ্রহণ থাকলেই বাংলাদেশের গরিবদের তিনবেলা খাওয়াতে পারবে বাংলাদেশ।
এদিকে গতকাল শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।’
শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের কঠর সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যে দেশের মন্ত্রীদের কাছে হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা দূর্নীতি বড় অঙ্কের মনে হয় না সেদেশের মানুষের জন্য এমন তহবিল অপ্রতুল। শুধু তাই নয় এই তহবিল ঘোষনা করা হয়েছে শুধুমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য। তাহলে নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের খাওয়াবে কে? তারা বলছেন, সরকারের সঠিক উদ্যোগই পারে এই গরিবদের মুখে খাবার তুলে দিতে।
সচেতন মহল বলছেন, মুজিববর্ষের নামে বিভিন্ন ব্যাংক গুলো থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনা চাইলে এই অর্থ দিয়ে গরিবদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারে। এছাড়া গত কয়েক মাসে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন অভিযানের নামে যেসব অর্থ সংরক্ষণ করেছে সে অর্থগুলো দিয়ে দেশের এই ক্রান্তিকালে জনগণের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত ও দেশের মানুষের প্রতি ক্ষমতাসীনদের ভালোবাসা থাকলে এই দূর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।