অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পিরোজপুর-১ আসনের সরকারদলীয় সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো সেই বিচারককে বদলি করার ঘটনায় দেশ জুড়ে চলছে সমালোচনা। আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে তোপের মুখে দায় স্বীকারও করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেই সমালোচনায় এবার যুক্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
বিচারক বদলির ঘটনায় বুধবার (৪ মার্চ) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। স্ট্যাটাসে এই ঘটনাকে আইনের চরম অবমাননা ও বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এই আইন অধ্যাপক।
অ্যানালাইসিস বিডির পাঠকদের জন্য আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:
আওয়ামী লীগকে নেতাকে দূর্নীতির মামলায় জামিন না দেয়ার পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে অপবাদ দিয়ে বদলী করে দেয়া হয়েছে। এর ৩০ মিনিটের মধ্যে নতুন বিচারক জামিনের ব্যবস্থা করেছেন।
এই সরকারই আবার বলে বিচার বিভাগ স্বাধীন!!!
শুধু শুধু এসব বলে লাভ নেই। মানুষ এতো বোকা না। মানুষের মনে আছে স্বাধীনভাবে রায় দেয়ার পর দেশের প্রধান বিচারপতিকে কি হেনস্থা করে দেশছাড়া করেছিলেন। কি অবস্থা করেছিলেন তারেক রহমানকে খালাস দেয়া বিচারকের।
মানুষের এগুলো ভোলার কথা না। খালেদা জিয়ার জামিন কেন হয়না মানুষ সেখান থেকে বুঝে নেয়।
পৃথিবীর কোন স্বৈরশাসন বিচার বিভাগকে স্বাধীন থাকতে দেয়না’।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের মামলায় একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আইন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি আদেশ অফিস ফ্যাক্সের মাধ্যমে আমরা পাই।
ওই আদেশে জেলা দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা জেলা জজ হিসেবে বদলিসহ একই সঙ্গে পিরোজপুরের যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাছরিনকে ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
নাহিদ নাছরিন এ দায়িত্ব পাওয়ার পর আউয়ালের পক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন পুনরায় আউয়াল দম্পতির জামিন পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই দিন আউয়াল দম্পতি জামিন লাভ করেন।
এদিকে এই ঘটনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগ চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তারা বলছেন, কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই তাদেরকে দুর্নীতির মামলায় জামিন দেওয়া হয়। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এরপরই জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নানকে প্রত্যাহার করা হয়। ওই ঘটনা স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অযাচিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যের জামিন নিশ্চিত করার জন্য পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নানকে বদলি করেন। জেলা ও দায়রা জজ বদলির কারণে সুপ্রিম কো্র্টের (অনুমতির) কোনও তোয়াক্কা করা হয়নি। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যের জামিন না মঞ্জুর করার কারণে পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজকে আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয়েছে।