অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এ দেশের রাজনীতি থেকে জিয়া পরিবার উচ্ছেদ করার জন্য বিগত ১০ বছর ধরে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার এই চক্রান্তের প্রথম ধাপ ছিল তারেক রহমানের দেশে আসার পথ বন্ধ করে দেয়া। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা শতভাগ সফল হয়েছেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে তারেক রহমানের পক্ষে আর দেশে আসা সম্ভব না।
তারপর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশের মাটিতে মারা গেলেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।
এরপর নজর দেয় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আর দশম সংসদ নির্বাচনের মতো একতরফা নির্বাচন করে শেখ হাসিনার পক্ষে ক্ষমতায় আসা সম্ভব না। সেই চিন্তা থেকেই কথিত জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবলের কথিত দুর্নীতি মামলা দুইটিকে আবার সামনে নিয়ে আসেন শেখ হাসিনা। দুই কোটি টাকার কথিত দুর্নীতির মামলায় অনুগত বিচারক দিয়ে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করেন ক্ষমতাসীন এই নেত্রী। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর শেখ হাসিনার সামনের সব বাধা দূর হয়ে যায়।
কিন্তু, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ঘোষণা দিল যে খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না তখন শেখ হাসিনার সামনে আরেক নতুন সমস্যা দেখা দেয়। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটসহ আরও কয়েকটি দল অংশ না নেয়ায় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক মহলও শেখ হাসিনার এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি। এখন একাদশ সংসদ নির্বাচনও যদি আগের মতো একতরফা হয় তাহলে শেখ হাসিনার সামনে নতুন সংকট দেখা দিতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই বিএনপিকে নির্বাচনে আনার আরেক নতুন কৌশল অবলম্বন করেন শেখ হাসিনা। আর সেই কৌশল ছিল ড. কামাল ও জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে।
দেখা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর নামে কথিত জাতীয় ঐক্য তৈরির ভুয়া স্লোগান দিয়ে একটি নির্বাচনী জোট গঠন করেন ড. কামাল। আর কামাল-জাফরুল্লাহর পাতানো ফাঁদে পা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতা। ২০ দলীয় জোটের মতামতকে উপেক্ষা করে কামালের কথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় বিএনপি।
২০ দলীয় জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু গণভবনে গিয়ে কামাল-জাফরুল্লাহরা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি জোরালো ভাবে তুলে ধরেনি। আসলে দুই দফা সংলাপও ছিল পাতানো। শেখ হাসিনা যেভাবে বলে দিয়েছেন কামাল-জাফরুল্লাহরা সেইভাবেই কথা বলেছেন। পরে ২০ দলীয় জোট ও বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করেই কামালের পাতানো কথিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে মিলে খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা।
নজিরবিহীন ভোটডাকাতির নির্বাচনের পর বিএনপির ৬ এমপি সংসদে যাবে না বলে ঘোষণা দেন। তাদের এই ঘোষণায় আরেক নতুন সংকট দেখা দেয় শেখ হাসিনার সামনে। কামাল থাকতেতো আর শেখ হাসিনার কোনো সমস্যা নেই। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে দলের দুই এমপিকে শপথ নিয়ে সংসদে পাঠান ড. কামাল। এরপর কামালের পরামর্শে বিএনপির ৬ এমপিও শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। এতে করে নির্বাচন ও সংসদ নিয়ে শেখ হাসিনার সামনে যতগুলো সংকট ছিল সবই দূর হয়ে গেল। বিশ্ববাসী দেখলো দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি সংসদে আছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার যে এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছিল কামাল-জাফরুল্লাহ, তাতে তারা শতভাগ সফল হয়েছে।
এরপর শুরু হয় শেখ হাসিনার নতুন চক্রান্ত। আর সেটা হলো খালেদা জিয়াকে দেশ ছাড়া করা। খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেও এখন স্বস্তি পাচ্ছেন না শেখ হাসিনা। এখন খালেদা জিয়াকে দেশছাড়া করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতেও শেখ হাসিনা ব্যবহার করছেন ড. কামাল ও জাফরুল্লাহকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পরিবারের লোকজন কয়েক দফা বৈঠক করেছেন ড. কামালের সঙ্গে। কামালের পরামর্শেই তারা খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করে বিদেশে পাঠাতে চাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।
জানা গেছে, আদালত যদি জামিন না দেয় তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করবে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। আর যেহেতু প্যারোলের বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির গোপন সমঝোতার অভিযোগ উঠছে, সে ক্ষেত্রে সমঝোতার বিষয়টিকে চাপা দেয়ার জন্য সরকারের নির্দেশে আদালত জামিনও দিতে পারে। তবে সব কিছু হচ্ছে ড. কামালের পরামর্শেই।