অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। তালিকায় নাম আসায় কথিত মুক্তিযোদ্ধারা শুধু সংবাদ সম্মেলন করেই প্রতিবাদ করেনি, কেউ কেউ তাদের বাব-দাদার নাম রাজাকারের তালিকা থেকে বাদ দিতে রাস্তায় নেমে মিছিলও করছে। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। সবার দাবি একটাই-এই তালিকা প্রত্যাহার করতে হবে। এই তালিকা প্রকাশের পর নাকি কথিত মুক্তিযোদ্ধাদের দোসরদের আত্মসম্মানে নাকি ময়লা লেগে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন তারা।
এখন পর্যন্ত জানা গেছে, প্রকাশিত তালিকার ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের মধ্যে আওয়ামী লীগের আছে-৮০৬০, বিএনপির ১০২৪ এবং অন্যান্য দলের ৮৭৯ ও জামায়াতের ৩৭ জন। লক্ষণীয় বিষয় হলো-কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে জামায়াতে ইসলামীর ও বিএনপির যেসব নিরপরাধ নেতাদেরকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছে তাদের একজনের নামও এই তালিকায় নেই।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, পাকবাহিনীর তৈরি করা তালিকা তিনি প্রকাশ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যেভাবে তাকে দিয়েছেন তিনি হুবহু সেটা প্রকাশ করেছেন। ভেতরে কার নাম আছে আর কার নাম নেই সেটা তিনি জানেন না। অপরদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন-আমাদের কাছে যা সংরক্ষিত ছিল আমরা সেটা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি।
সরকার না দেখেই পাক সেনাদের তৈরি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো দুই মন্ত্রণালয় কি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে?
সূত্র বলছে, এটা মন্ত্রণালয়ের কোন ব্যর্থতা নেই। আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিলো বিরোধী মত দমন করা। বিশেষ করে জামায়াতকে রাজনীতির ঐক্য থেকে দুরে সরিয়ে দিতে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নাটক করে জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানো। সেটা এখন হয়ে গেছে। তাহলে বিচারের শুরুতে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেনি কেন সরকার? কি কারণে এতদিন পর এই তালিকা প্রকাশিত হলো?
সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই তালিকা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা অবহিত আছেন। তারা ইচ্ছে করেই দেরিতে তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০১০ সালে যখন জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা, তখনই একবার এই তালিকা দেখেছেন। যখন দেখছে যে জামায়াত নেতাদের নাম এই তালিকায় নেই তখন দাদাল আইন বাদ দিয়ে নতুন আইন পাস করলো যে, খুন-হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের দায়ে বিচার হবে। তারপর দেখলো জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমাণ করারও যথেষ্ট পরিমাণ ডকুমেন্ট তাদের কাছে নেই। পরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কিছু লোককে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছে। বিনিময়ে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে।
তারপর, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা প্রকাশের একটা প্রস্তাব সরকারের ভেতর থেকেই উঠেছিল। কিন্তু, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কড়া বার্তা দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল এনিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। এই তালিকা এখন প্রকাশ করলে সব কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। জামায়াত নেতাদের বিচার আর করা যাবে। তখন জামায়াত বাদ দিয়ে দলের নেতাদের বিচার করতে হবে।
এই কারণে এতদিন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেনি সরকার। নিরপরাধ জামায়াত নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার পর রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করলো সরকার। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাচাতে কিছু লোক এখন প্রকাশিত তালিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।