অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে জুয়ারির দেয়া প্রস্তাব না জানানোর দায়ে ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য নিসন্দেহে একটি বড় ধরনের খারাপ সংবাদ। সারাদেশে দুইদিন ধরে শুধু এনিয়েই নানান ধরনের আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন এটা বিসিবি সভাপতি পাপনের ষড়যন্ত্র। আবার কেউ কেউ বলছেন সাকিবের এই শাস্তি প্রাপ্য ছিল। সে তার পাওনাটা পেয়েছে।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয় কে এই সাকিব? কি তার পরিচয়? উত্তরটা একেবারেই সহজ। সাকিব একজন আওয়ামীপন্থী ক্রিকেটার। দেশের ১৭ কোটি মানুষের চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে ক্রিকেট মাঠে সাকিব শেখ হাসিনা এবং পাপনের চাওয়া-পাওয়াটাই বেশি প্রাধান্য দিয়ে আসছে। শেখ হাসিনা এবং পাপন যখন যেভাবে বলেছে সাকিব সেভাবেই খেলেছে।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে মিরপুর শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ। ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচে সাকিব ক্যাচ মিস করে ভারতকে জেতার সুযোগ দিয়েছিল। পরে ফাইনালে সাকিব যা করেছিল এতে শুধু ক্রিকেট ভক্তরাই নয়, পুরো জাতি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। একটা জেতা ম্যাচ হারিয়ে দিয়েছিল সাকিব। ওই সময় মানুষ সাকিবের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। এরপর ভারতের সঙ্গে আরও অনেকগুলো ম্যাচে সাকিব এমন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, শেখ হাসিনা ও পাপনকে খুশি রাখতে সাকিব প্রায় সময় আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডেও অংশ নিয়েছে। রংপুরে একটি সমাবেশে গিয়ে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। আর সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বনের ভোটডাকাতির নির্বাচনেতো সাকিব নিজেই প্রার্থী হতে চাচ্ছিল। শেষমেষ প্রার্থী না হলেও আওয়ামী লীগের কর্মীর মতোই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। আর যেখানে সুযোগ পেয়েছে সেখানেই হাসিনার কথিত উন্নয়নের সাফাই গেয়েছেন। মজার ঘটনা হলো-এত দালালি করেও শেখ হাসিনা ও পাপনের রোষানল থেকে রক্ষা পাননি সাকিব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাকিবকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। কিন্তু, এই নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে গণভবনে। আর এর মূল কারণ হলো-বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ধর্মঘট করা।
গত সপ্তাহে সাকিবদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়ে পাপনকে গণভবনে ডাকেন। ধর্মঘটের কারণ জানতে চাইলে পাপন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন-বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করতে সাকিব ষড়যন্ত্রে নেমেছে। সাকিবদের পেছনে একটা বড় শক্তি আছে। পাপন হাসিনাকে এও বলেন যে, সাকিবকে আপাতত সরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সমস্যা হবে। আর কিভাবে তাকে সরাতে হবে সেই কথাও জানান পাপন। সব শুনেই শেখ হাসিনা পাপনকে পরামর্শ দেন যে, আপতত সব দাবি মেনে নাও। তারপর অ্যাকশন। এরপরই গণভবন থেকে বেরিয়ে পাপন ক্রিকেটারদের সব দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। এটা ছিল মূলত পরিস্থিতিকে তাৎক্ষণিকভাবে শান্ত করা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিসিবি সভাপতি পাপন আগেই এসব জানতেন। তার অনুরোধেই আইসিসি সাকিবকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও পাপন এখন অস্বীকার করে বলছেন যে, আমি এসব কিছুই জানতাম না। আর সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার বক্তব্য থেকেও বুঝা গেছে ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিত। কারণ, সাকিবের পক্ষে তার কোনো জোরালো বক্তব্য ছিল না। শুধু বলেছেন, আমাদের তেমন কিছু করার নেই।
এছাড়া বিসিবি সভাপতি পাপনের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন ১৯৯৬-২০০১ সময়ের বোর্ড প্রধান সাবের। বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কয়েকটি টুইট করেছেন তিনি।
পাপনের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে এক টুইটে সাবের লিখেছেন- “আমার মনে হয় বিসিবি পুরোপুরি অবহিত ছিল। মিস্টার পাপন যে বলেছেন, তার কোনো ধারণাই ছিল না, কথাটা সত্য নয়। দুঃখ লাগলেও আমার এটা বলতে হচ্ছে। ২২ অক্টোবরের ভিডিও ক্লিপ, দেখে মনে হচ্ছিল পাপন সাহেব আইসিসির ঘোষণার জন্য অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছিলেন।”
অপর টুইটে সাবের লিখেছেন, ‘অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি হবে। বিসিবি কমপক্ষে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানোর চেষ্টা করতে পারত। দুঃখ লাগছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এ ব্যাপারে সাকিবের পাশে দাঁড়ায়নি। এখন অযথা মায়াকান্না দেখাচ্ছে।”