অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সারাদেশে যখন ছাত্রলীগ লুটপাট, ছিনতাই, চাঁদাবজি,খুন,ধর্ষণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে ঠিক তখন মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো মানবিক, দেশপ্রেমিক বলে তাদের পক্ষে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করছে।
গতকাল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতার ঠিকাদারির লাভের অঙ্ক ফেরত দেওয়ার একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সেখানে বলা হয় ছাত্রলীগ নেতাদের নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরই মাঝে সরকারি প্রকল্পের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর নাম মো. আবু তৈয়ব। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সত্যিই কি এরকম কোন ঘটনা ঘটেছিলো?
ফ্যাক্টচেক-এর অনুসন্ধানে জানাগেছে,তৈয়ব নামে কোনো ঠিকাদার নেই। ওই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে জিনি কাজ করছেন তার নাম অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা।
ফ্যাক্টচেক এর সাথে কথা হয় চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহানের সাথে। তিনি হাসতে হাসতে বলেন,”ঠিকাদারের পক্ষ থেকে টাকা ফেরত দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই। বায়েজিদ পার্কে ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ছিলো। এটা চূড়ান্ত কিছু নয়। কখনো কোনো ঠিকাদারকে প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয়ের পুরো টাকা দেয়া হয় না। এটার সুযোগই নেই। কারণ প্রথমে যে ব্যয় ধরা হয় তা আনুমানিক। কাজ শেষে খরচ কমবেশি হতে পারে। ফলে আনুমানিক ব্যয় যেটা ধরা হয় সেটি ঠিকাদারকে একসাথে দেয়া হবে কেন?”
তিনি জানান, ২০১৭ তে শুরু হয়ে ২০১৮ এর ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। তখন মোট প্রকল্প ব্যয় নির্ধারিত হয়, এবং তখনই হিসাব করে দেখা যায় মোট ব্যয় ৮ কোটি টাকার কিছু বেশি হয়েছে।
কিন্তু সেই ছাত্রলীগ নেতাকে নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেমিক বলে ফলো আপ করে দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো। এখন দেখে নেওয়া যাক ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে কি শিরোনাম করেছিলো তারা।
কালের কন্ঠ লিখেছে, সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত দিলেন ছাত্রলীগ নেতা
ঢাকা ট্রিবিউন লিখেছে, কাজ শেষে সরকারকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ফেরত দিলেন ঠিকাদার
মানবজমিন লিখেছে, ঠিকাদারির লাভের অঙ্ক ফেরত দিলেন ছাত্রলীগ নেতা
এই সংবাদ প্রকাশের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়বের সাথে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টচেক। হলে তিনি বলেন, ‘ভাই, আমাকে নিয়ে কেন এসব হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। আমি তো ওই প্রকল্পের ঠিকাদারই না। সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কিছু কাজ করেছি। আমি কিভাবে পুরো প্রকল্পের টাকা ফেরত দেব?’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের যে ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল সেটা ছাড় হয়ে (অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে) পিডাব্লিউডি (গণপূর্ত বিভাগ) এর কাছে এসেছিলো। কিন্তু কাজ শেষে পুরো টাকা না লাগায় সেটি ফেরত গেছে। কিন্তু ঠিকাদারের হাত থেকে তো ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এই টাকা তো ঠিকাদারের কাছেই আসে নাই।’
সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত রিপোর্টে তো আপনার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে আপনি টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। আপনি কি তাহলে এখন ভিন্ন কথা বলছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমি বলিনি আমি ফেরত পাঠিয়েছি। বলেছি পিডাব্লিউডি থেকে টাকাটা ফেরত গেছে। ঠিকাদার বা আমি বেঁচে যাওয়া টাকা ফেরত পাঠিয়েছি এমন কথা আমি বলিনি।’
উভয়ের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তৈয়ব ওই প্রকল্পের ঠিকাদারই নন ঠিকাদার হলেন অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা। অথচ মিডিয়ার খবরে এসেছে তৈয়বই এই প্রকল্পের ঠিকাদার বাস্তবে তিনি উপ-ঠিকাদার, যার সাথে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত ৪ কোটি টাকা ঠিকাদারের হাতেই আসেনি। ফলে সেই টাকা সরকারকে ফেরতে দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
অর্থাৎ, তৈয়বকে নিয়ে প্রচারিত এসব তথ্য ভুয়া। এবং তিনি নিজেই এখন তা স্বীকার করছেন।