অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশে সাম্প্রতিক সংঘটিত তিনটি ঘটনার পর রাজনীতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে একজন রিকশাওয়ালার মুখ থেকে শুধু একটি প্রশ্নই শুনা যাচ্ছে-দেশে এসব কি হচ্ছে? ভবিষ্যতে আর কি হতে যাচ্ছে? লাখ লাখ মানুষের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের লাল সবুজের পতাকাটা আর কত দিন টিকে থাকবে? পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে আমরা এখন ভারতীয় শকুনের কবলে পড়েছি? অর্জিত স্বাধীনতা কি আমাদেরকে আবারো হারাতে হবে?
সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার চুক্তি, এরপর এই চুক্তির প্রতিবাদ করায় বুয়েটের ছাত্র আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা এবং ৩ জন র্যাব সদস্যকে ধরে নিয়ে বিএসএফের নির্যাতনের পর সবার মুখে এখন ঘুরে ফিরে এসব প্রশ্নই শুনা যাচ্ছে। এসব প্রশ্ন হঠাৎ করেই তৈরী হয়নি। যৌক্তিক কারণও আছে।
প্রথমত: শেখ হাসিনা তার এবারের ভারত সফরে যেসব চুক্তি করে আসছেন তার মধ্যে চারটি চুক্তি খুবই আত্মঘাতী। ফেনী নদীর পানি, গ্যাস রপ্তানি, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি এবং উপকূলীয় এলাকায় ২০টি রাডার বসিয়ে নজরদারী করবে ভারত। শেখ হাসিনার এসব দেশবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুসছে সারাদেশ। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ হাসিনার এই চুক্তির বিরোধীতা করছে। বিশেষজ্ঞরাও চুলছেড়া বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এসব চুক্তি একটিও দেশের স্বার্থে করা হয়নি।
অথচ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে ভারতের পক্ষে অবলীলায় যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভারতের পক্ষে অকাট্য যুক্তি দেখিয়েছেন। ফেনী নদীর পানি নিয়ে তিনি বলেছেন, প্রতিবেশ দেশ একটু খাবার চাইলে সেটা না দিলে কেমন হয়? মানবিক কারণে তিনি ভারতকে ফেনী নদী থেকে পানি তুলে খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। অথচ, তিস্তার কারণে আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চল একেবারে মরুভুমি হয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে ভারত আশ্বাস দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত তার তিস্তা নিয়ে চুক্তি করছে না। বরং বর্ষাকালে ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয়। যাতে উত্তরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। অথচ সেই ভারতের পক্ষেই সাফাই গাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে তার দেয়া বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে তিনি ভারত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সেদিন আওয়ামী লীগের নয়, বিজেপির নেত্রীর ভুমিকা পালন করেছেন। যেন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন।
দ্বিতীয়ত: শেখ হাসিনার এই দেশবিরোধী চুক্তির বিপক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে তার সোনার ছেলেরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে। এই হত্যাকান্ডের মূলহোতা ও ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সংগঠন ইস্কনের সদস্য অমিত সাহা বলেছেন-উপরের নির্দেশ না মেনে পারা যায় না। এতে বুঝা যায় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আবরারকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হলেও এখন আর ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। দেশটা এখন আর কতটুকু স্বাধীন আছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তৃতীয়ত: বৃহস্পতিবার র্যাবের তিনজন সদস্যকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে ভারতীয় বিএসএফ। সরকার এ ঘটনার প্রতিবাদ করবে তো দূরের কথা র্যাব সদস্যরা ভুলে ভারতে গিয়েছিল বলে প্রচার করা হচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে র্যাব সদস্যদেরকে মাদকসেবীরা মেরে ভারতে ফেলে দিয়েছে। বিএসএফ তাদেরকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।
এসব ঘটনায় এখন সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ খুব শিগগিরই ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।