ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাব।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে ৫৯ নম্বর সড়কের বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
রাজধানীর ৬০টি স্পটে এমন অবৈধ ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) ব্যবসা চলছে। কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের একশ্রেণির নেতা এ ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
গণমাধ্যমের খবর, ইতিমধ্যেই জুয়ার আড্ডাগুলো সম্পর্কে সম্প্রতি প্রমাণসহ গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সম্প্রতি কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন- আমার কাছে আরও তথ্য আছে রাজধানীর সব সুউচ্চ ভবনের ছাদ দখল নিয়েছে যুবলীগের নেতারা। সেখানে ক্যাসিনো খোলা হয়েছে। যুবলীগের সবার আমলনামা আমার হাতে এসেছে। আমি সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় যুবলীগ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন- যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা (ঢাকা মহানগর যুবলীগের একটি অংশের সভাপতি) ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন। আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয়নি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেনি। যখন দলের দুঃসময় ছিল, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টানা তিন বার সরকারে আছি। অনেকের অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান- এসব বন্ধ করুন। অস্ত্রবাজ-চাঁদাবাজদের হুশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান- এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরকেও দমন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এমন কঠোর অবস্থানের পরই বুধবার র্যাব রাজধানীর ফকিরেরপুলে ইয়ংমেনস ক্লাব নামে একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায়। সেখানে নারীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। ক্লাবের ভেতর থেকে নগদ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিতর্কিত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ধরতে তার গুলশানের ওই বাড়িতে ঘেরাও করে র্যাব। পরে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাকে অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব।
খালেদ ভূঁইয়া বেড়ে উঠেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে। তিনি রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরেরপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবটি তিনি সরাসরি পরিচালনা করেন। এসব ক্লাবে প্রতিদিন ১০টা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর। একই সঙ্গে চলে মাদক ব্যবসা।
ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, আমরা ক্লাবটিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছি। ক্লাবের ভেতর থেকে নগদ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আটকদের ৬ মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোর আড়ালে ক্লাবটিতে মাদক ব্যবসা চলত বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকেও নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুরহাট নিয়ন্ত্রণ করেন এই খালেদ।
এ ছাড়াও খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের হাট বসান এই বির্তকিত নেতা। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজার সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন খালেদ।
সূত্র: যুগান্তর