অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় কয়েক হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। তবে এই সংখ্যা নিয়েও ইসির মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অতিরিক্ত সচিব বলছেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ইভিএমের সংখ্যা এক হাজারের কম হবে না। অন্যদিকে আর এনআইডির মহাপরিচালক বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ইভিএমের সংখ্যা এত বেশি হবে না। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তিদিন পার হলেও আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে ইসি ও ফায়ার সার্ভিস কেউই চূড়ান্তভাবে কিছু বলতে পারেনি।
একটি ভবনে স্বাভাবিক ভাবে সর্টসার্কিট লেগে আগুন লাগতেই পারে। তাহলে নির্বাচন অফিসে আগুন লাগানো নিয়ে কেন এই ধুম্রজাল? তাহলে কি ইভিএম ক্রয়ের দুর্নীতি আড়াল করতেই অগ্নিকাণ্ড?
অনুসন্ধান বলছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে ইভিএম প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এর মধ্যে দেড় লাখ ইভিএম বাবদ খরচ ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ইভিএম বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। কিন্তু এর আগে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসির জন্য যে ইভিএম তৈরি করেছিল সেটার দাম ছিল ২০-২২ হাজার টাকা। অপরদিকে, প্রতিবেশি দেশ ভারতে একই মানের ইভিএম ব্যবহার করছে যার ব্যয় মাত্র ২১ হাজার ২৫০ টাকা। মোটকথা প্রতিটি ইভিএম মেশিন ক্রয়ে ২ লাখ ১৩ হাজার ১২৩ টাকা বাড়তি ব্যয় দেখিয়েছে তথাকথিত নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেড় লাখ ইভিএম থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিরা।
এবার আসুন নির্বাচন ভবনের রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখা যাক। বিশ্লেষকরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, নতুন বিল্ডিংয়ে শর্ট সার্কিট কেন হবে। আর শর্ট সার্কিট হলে ভবনের দেয়াল ফেটে যাবে। বিষয়টি ভালোভাবে বিশেষজ্ঞদের তদন্ত করা উচিত। নেপথ্যে অন্য কোনো কিছু আছে কি না সেটিও দেখা দরকার। কেননা, ইসি ভবন একটা স্পর্শকাতর ক্ষেত্র। আর স্পর্শকাতর এমন ভবনে কিভাবে অগ্নিকান্ড ঘটেছে তার রহস্য খুব সহজেই উদঘাটন হওয়ার কথা। অথচ অগ্নিকান্ডের ২ দিন পরেও এটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেই মনে হচ্ছে। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে শুধুমাত্র সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করলেই অনেক রহস্যের সমাধান করা যেত।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের মুল রহস্য বের না করে ইভিএম কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এই নিয়ে চলছে মতদন্দ্ব। একদিকে ইসি সচিব বলছেন, ‘সেখানে ইভিএম মেশিন পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মতো ছিল। আমার কাছে মনে হয়, ক্ষতিগ্রস্ত ইভিএম মেশিন এক হাজারের কম হবে না।’ অন্যদিকে অতিরিক্ত সচিব মো: মোখলেছুর রহমান বলেছেন, এতে ক্ষতির পরিমাণ অল্প।
নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে পক্ষে আর কেউই ছিলোনা। রাষ্ট্রপতির সংলাপে গিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই ইভিএমের প্রস্তাব করার পর থেকেই রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে এর বিরোধীতা করা হলেও জনমতকে আগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগ ইভিএম নিয়ে আসে। আর এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পকেটস্থ করার বিশাল সুযোগ করে দেয় ক্ষমতাসীনরা।
সচেতন মহল বলছেন, সবাই ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা একক সিদ্ধান্তে ইভিএম কেনা হয়। এতদিন বলা হতো যে, নির্বাচনে ভোট কারচুপির জন্য সরকার আগামী নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার করতে চাচ্ছে। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে শুধু ভোট জালিয়াতিই নয়, এর মাধ্যমে বিতর্কিত সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে ব্যবহার করে সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটেরও ব্যবস্থা করেছে। আর এই দুর্নীতি অড়াল করতেই অগ্নিকাণ্ডের নাটক সাজানো হয়েছে।
আর যখন এই অগ্নিকান্ডের নাটক সাজানো হয়েছে ঠিক সে সময়ে এসবের দায় থেকে বাঁচতে পূর্বপরিকল্পিতভাবেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা অ্যানালাইসিস বিডিকে জানান, ইভিএম ক্রয়ে অনেকটা বাড়াবাড়ি ভূমিকা পালন করেছেন কে এম নুরুল হুদা ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ হেলালুদ্দীন আহমদ। তখন থেকেই ইভিএম ক্রয়ে বড় ধরনের দুর্নীতির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। আর গত ৯ তারিখের অগ্নিকান্ডের সাথে এসব দুর্নীতির যোগসূত্র থাকলেও অবাক হবো না।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন সচিব হেলালুদ্দীন বেশ কিছু বিতর্কিত ভূমিকা পালনের জন্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে যে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হবে তা সচিব হেলালুদ্দীনের কর্মকান্ড ও কথা-বার্তায় স্পষ্ট হয়েছিল। বর্তমানে মোহাম্মদ হেলালুদ্দীন আহমদ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। গত ২৬ মে ২০১৯ তাকে নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। নির্বাচনে ভোট ডাকাতির পুরস্কার হিসেবে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এ কথা এখন আমলা পাড়ায় (সচিবালয়) ওপেন সিক্রেট।