জুনায়েদ আব্বাসী
বিগত ১০ বছরে শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি-জামায়াতের আমলে ধনীরা তিন বেলা, মধ্যভিত্ত শ্রেণির মানুষ দুই বেলা আর গরিব মানুষ এক বেলা খেয়ে জীবন-যাপন করেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সকল শ্রেণির মানুষ এখন পেট ভরে তিন বেলা ভাত খেতে পারছে। যদিও খাবারের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় বাবা-মা তাদের শিশু সন্তানদেরকে বিক্রি করে দেয়ার খবরও শুনা যায়।
তারপর, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর আগে মানুষ ভোট দিতে পারতো না। যদিও ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ফজরের আযানের আগেই শেষ হয়ে যায়। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে গেছে মানুষকে মাইকিং করেও ভোট কেন্দ্রে আনা যাচ্ছে না। তারপর, শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে এতই মজবুত করেছেন যে, কেয়ামতের আগে আর ধসে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো-কথিত বায়ুবীয় উন্নয়নের হাজার হাজার প্রকল্প তৈরি করে শেখ হাসিনার আপনজনরা লাখ লাখ কোটি টাকা লুটেপুটে নিচ্ছে। যার কারণে দেশের শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং সেক্টর একেবারেই ধসে পড়েছে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতও এখন প্রায় প্রতিদিন এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
তারপর, এদেশের মানুষ এক সময় শেকেল তথা মধ্যযুগীয় যুগে বসবাস করতো। শেখ হাসিনা বিগত ১০ বছরে ডিজিটালের মাধ্যমে মানুষকে আলোর যুগে নিয়ে এসেছেন। তিনি দেশকে ডিজিটালের এমন আলোয় আলোকিত করেছেন যে, ছেলে মেয়েরা এখন গায়ের পোশাক খোলে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে। বিষয়টা হলো-শেখ হাসিনার উন্নয়নের সবকিছুই আপনি ভোগ করবেন কিন্তু শর্ত হলো ঘর থেকে বের হবেন না। কারণ, বাসা থেকে বের হয়ে পুনরায় সুস্থ শরীরে আপনি বাসায় ফিরে আসবেন সেই গ্যারান্টি বর্তমানে এদেশে নেই।
এছাড়া, রাস্তায় আপনার স্ত্রী, বোন, সহকর্মী কিংবা পরিচিত কোনো নারীকে বখাটেরা উত্ত্যক্ত করলে কখনো প্রতিবাদ করবেন না। মাথা নিচু করে চলে যাবেন। আর যদি প্রতিবাদ করেন তাহলে ফলাফল বরগুনার রিফাত ও ঠাকুরগাঁওয়ের সানজিদা আক্তারের মতোই হবে।
আপনি যদি ক্ষমতাসীন দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী না হন তাহলে পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হবে না। কারণ, বর্তমান পুলিশ নামের পেটুয়া বাহিনীকে আপনার নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। তারা নিয়োজিত আছেন ক্ষমতাসীন দলের মাস্তান-গুন্ডা-পান্ডা ও সমাজের চিহ্নিত মাদকসেবী ও সন্ত্রীদের রক্ষার জন্য।
টেলিভিশনে, পত্রিকায় পাতায় ও অনলাইন গণমাধ্যমের খবরে হয়তো দেখবেন পুলিশের আইজি বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সমাজে কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে না। নাগরিকদের ভয়-আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। সাবধান! পুলিশের কথা বিশ্বাস করলেই মরবেন। কারণ, পুলিশ কখনো আপনার বন্ধু নয়। তারা হলো মাদকসেবী আর সন্ত্রাসীদের রক্ষাকারী। সন্ত্রাসীরা আপনাকে কুপিয়ে হত্যা করলেও পুলিশ এটাকে বলবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের দাবি যে মিথ্যা এখন সেটার প্রমাণ দিচ্ছি।
বিগত ২৬ দিনে সারাদেশে ২২ নারী-পুরুষকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
২৬ জুন বুধবার রাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মা-ছেলেকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বত্তরা। ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী বিউটি আক্তার কুট্টিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
২২ জুন শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ইমরান হোসেন সরদার (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ২১ জুন রাজশাহীর মোহনপুরে আসমা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯ জুন মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে জয় পাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী এরশাদ মুন্সী নিহত হয়েছেন। ১৯ জুন দামুড়হুদায় শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে ঘরের ছাদের সঙ্গে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ১৭ জুন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মদক সেবনে নিষেধ করায় আমির উদ্দিন (৮০) নামের এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করেছে লোকমান হোসেন তুরা (৫০) নামের এক মাদকসেবী।
১৭ জুন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় মো. আরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
১৬ জুন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে ফখরুল হাওলাদার (৪৫) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
১৫ জুন যশোরের চৌগাছায় পুকুর ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বে মমিনুর রহমান (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আপন খালাতো ভাইরা। ১৩ জুন নাটোরের গুরুদাসপুরে মো. জালাল উদ্দিন (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হাত-পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। ১২ জুন শায়েস্তাগঞ্জে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী মুক্তিরাণী দাসকে (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। ১১ জুন সাভারে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করেছে এক স্বামী।
১১ জুন নড়াইল হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের নৈশপ্রহরী মান্নান শেখকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ১০ জুন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় গৃহবধূ পারভীন আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ৭ জুন লালমনিরহাটে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মঞ্জু মিয়া (৪৫) নামে এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৫ জুন ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাকিম মিজিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
কুপিয়ে হত্যার এই পরিসংখ্যান থেকে নিশ্চয় আপনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা নিতে পারছেন। আর পুলিশ যে নিরাপত্তার চাদরের কথা বলে সেটাও কিন্তু সত্য। তবে হ্যাঁ, পুলিশ তাদের সেই নিরাপত্তার চাদর দিয়ে মূলত খুনী, মাদকসেবী, সন্ত্রাসী, চুর, ডাকাত, ছিনতাইকারীদেরকে ঢেকে রেখেছে। কথাটা আরও সহজভাবে বলায়-পুলিশের নিরাপত্তার চাদরের নিচেই এখন খুনী, সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের বসবাস।
কারণ, সত্যিকার অর্থে যদি পুলিশ প্রকৃতি অপরাধীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতো, তাহলে প্রতিদিন এভাবে কেউ কাউকে কুপিয়ে হত্যার দু:সাহস দেখাতো না। অপরাধীদেরকে লালন করার কারণেই সামাজিক অপরাধ আজ সীমার বাইরে চলে গেছে।