অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সোমবার স্মরণ কালের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। একটি রেল সেতু থেকে ৫টি বগি ছিটকে খালে পড়ে যায় এবং কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সেতুটি একটি গ্রাম ও বাজারের নিকটবর্তী হওয়ায় দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের চিৎকার শুনে লোকজন এসে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে পেরেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, আমরা সহজে উদ্ধারকার্য চালাতে পেরেছি বলে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেনি। অন্যথায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় কয়েকশ মানুষের প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা ছিল।
এদিকে, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা নিয়ে রেলমন্ত্রী, সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তারা নিজেদের দায় এড়িয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। রেলমন্ত্রীর দাবি-অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সচিব বলছেন-অতিরিক্ত যাত্রী ও দ্রুতগতিতে চলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে সচেতন মহল বলছেন, দায় এড়ানোর জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের উপরস্থ কর্মকর্তারা এসব কথা বলছেন। অনেকটা উদুর পিন্ডি বুধুর ঘাড়ে দিয়ে পার পেতে চাচ্ছেন তারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অতিরিক্ত যাত্রী কিংবা দ্রুতগতিতে চলার কারণে নয় বরং বাঁশ দিয়ে স্লিপার তৈররি কারনে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ি কুলাউড়ার এই রেল সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যায় জর্জরিত। ২০১৭ সালের প্রথমেই সেতুটি চলাচলের জন্য বিপদজনক ছিল। সেতুটির অধিকাংশ কাঠের স্লিপার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখন কর্তৃপক্ষ নষ্ট কাঠের স্লিপার ঠিক করতে বাঁশ ব্যবহার করে।
ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বাঁশ ব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন করা হলেও টনক নড়েনি কতৃপক্ষের। ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কিলোমিটার রেললাইনের বেশির ভাগ স্লিপার নষ্ট এবং রেললাইন অনেক পুরনো ও ব্যবহার অনুপযোগী। এই রেললাইনের সংযোগস্থলের অনেক জায়গায় প্রয়োজনীয় নাট-বল্টু না থাকায় বাঁশ ব্যবহার হয়েছে। বাঁশের ব্যবহারের ফলে ট্রেন যোগাযোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে। যে কোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে। একটি ইংরেজি দৈনিকে এই ব্রীজ নিয়ে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছিল, সেতুটি ৫০ শতাংশ কাঠের স্লিপার নষ্ট হয়েছে।
স্থানীয়রাও বলছেন, আমরা বার বার কর্তৃপক্ষকে বলেছি সেতুটি নষ্ট হয়ে গেছে। যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি। যার কারণে আজ এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটার দায় সম্পূর্ণ রেল কর্তৃপক্ষের।