অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে খেলতে গিয়ে এবার বোল্ড আউট হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, মাজারপূজারী ও চরম ইসলাম বিদ্বেষী সামীম মো. আফজাল। এর আগে জামায়াতকে নিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড আউট হয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, কথিত গণজাগরণের নায়ক খ্যাত ডা. ইমরান এইচ সরকার ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। জামায়াতকে নির্মূল করার জন্য যত প্রকার চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আছে সবই তারা করেছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তারা আর মাঠে থাকতে পারলেন না। যারা তাদেরকে মাঠে নামিয়েছিল সেই হাসিনাই এখন তাকে ‘ছোড়ে’ ফেলে দিয়েছে।
জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো ও জামায়াত নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখলে নেয়ার জন্য শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছিলেন সামীম মো. আফজালকে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন জামায়াত ঘাটি হয়ে গেছে এমন অভিযোগ এনে সামীম আফজাল এটাকেও তার দখলে নিয়েছিলেন।
দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংককে সরকার দখলে নেয়ার পরই ব্যাংকটির গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব দেয়া হয় সামীম আফজালকে। তিনি এসেই জামায়াত কানেকশান অজুহাত তুলে ব্যাংকটির অনেক মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাকে ছাটাই করে। সহজভাবে বলা যায় সামীম আফজাল এসেই ইসলামী ব্যাংককে অস্থির করে তুলে। একটি পর্যায়ে মালিক পক্ষের সঙ্গেও তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরে ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এরপর শুরু করেন ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে। এখানে এসে প্রথমেই সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাফিজুর রহমানসহ গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তার ও কর্মকর্তাদেরকে অপমান করে সরিয়ে দেয়। পুরো হাসপাতালই তিনি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। ঠিক ব্যাংকের মতো হাসপাতালটিকেও অস্থির করে তুলেন। এক পর্যায়ে ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সবাই তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। নালিশ যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও। এরপর অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে এখান থেকেও তিনি বিদায় নেন।
এরমধ্যে তিনি ব্যাংক ফাউন্ডেশন থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হওয়ার পর এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেন নি। এখানে তার বড় অপকর্ম ছিল নিয়োগ দুর্নীতি। বিগত কয়েক বছরে যত লোক নিয়োগ দিয়েছেন সবই ছিল টাকার বিনিময়ে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেছেন।
এছাড়া, সামীম আফজালের সবচেয়ে বড় মিশন ছিল জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে গিয়ে তিনি বলতেন, জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জামায়াত জড়িত। এসব কাজে জামায়াতকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও ব্যাংক হাসপাতাল। তিনি সব সময় সরকারকে বলতেন এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য।
সর্বশেষ দেখা গেল, যেই শেখ হাসিনার জন্য সামীম আফজাল এতদিন ধরে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন, সর্বশেষ সেই হাসিনাই এখন তাকে ছোড়ে ফেলে দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সামীম আফজালের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারাই তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রতিদিন অভিযোগ পাঠাচ্ছেন। এসব অভিযোগের পর প্রধানমন্ত্রী তাকে ইফার ডিজি পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তাকে সরিয়ে দেয়ার খবর পাওয়ার পরই শনিবার ছুটির দিনে ফউন্ডেশনের অফিসে গিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি সরানোর জন্য। কিন্তু, সেটা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইজ্জত রক্ষায় তিনি এখন নিজ থেকেই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।