অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে অন্তকোন্দল চরমে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলনের এক বছর পর গতকাল বিকেলে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। কমিটি ঘোষণার পর যাঁরা প্রত্যাশিত পদ পাননি এবং কমিটিতে জায়গা পাননি, তাঁদের অনেকের ক্ষোভ প্রকাশ্যে এল।
ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছে হত্যা ও মাদকসহ বিভিন্ন মামলার কয়েকজন আসামি। রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, অগ্নিসন্ত্রাসে যুক্ত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় ও অছাত্ররাও। কিন্তু পদোন্নতি মেলেনি ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতাদের। এমন কি পদন্নতি না পেয়ে পদত্যাগ করেছেন অনেকেই।
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিরোধিতাকারীরা সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিন এলাকায় গেলে মারধরের শিকার হন। আহত অবস্থায় তাদের কমপক্ষে সাত জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে শ্রাবণী দিশা চোখে আঘাত পেয়েছেন, মাথার পেছনে আঘাত পেয়েছেন তানজির শাকিল। এছাড়া আহত হয়েছেন লিপি আক্তার, ফরিদা পারভীন, তিলোত্তমা শিকদার, জেরিন জিয়া ও শ্রাবণী শায়লা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন নতুন কমিটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত কমিটিতে আমাকে উপ সম্পাদক করা হয়েছিল, এবারো উপ সম্পাদক দিয়ে অপমান করেছে। তিনি আরো বলেন, আমার সমবয়সী যাদের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে থাকার পরও আমার যোগ্যতার যেহেতু মূল্যায়ণ করা হয়নি, তাই আমি এই ছাত্রলীগ আর করবো না। আমার সঙ্গে যারা রাজনৈতিক মাঠে কম সক্রিয় ছিল তারা সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছে। কিন্তু আমাকে আগের অবস্থানেই রেখে দিয়ে আমার যোগ্যতাকে মূল্যায়ণ করা হয়নি।
২০১৮ সালে অধিভুক্ত কলেজ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে তৎকালীন ঢাবির বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবনী শায়লা। এই কমিটিতে পদ মেলেনি তারও। বরং ছাত্রলীগের হাতে নিপিড়নের শিকার হয়েছেন তিনি।
বর্তমান কমিটিতে উপসম্পাদকের পদ পেয়েছেন বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের সভাপতি ফরিদা পারভীন। পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন তিনিও। তিনি বলেন, আমরা আজ অযোগ্যদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা করে সেটা বানচাল করা হয়েছে। আমরা মঙ্গলবার আবার সংবাদ সম্মেলন ডাকব। সেখানে আমরা পদত্যাগ করার ঘোষণা দেবো।
ছাত্রলীগের এই কমিটিতে পদ দিতে টাকার লেনদেনের অভিযোগও করছেন বিক্ষোভকারীরা। লিপি নামে একজন ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, আমাদের কাছে এমন মেসেজও রয়েছে যে কক্সবাজারের একজনকে সহসম্পাদক দেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে। এছাড়াও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত অনেককেই এই কমিটিতে স্থান করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে। এ তালিকায় বাদ যাচ্ছেন না নারী নেত্রীরাও। শোভন-রাব্বানীকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যও করেছেন কেউ কেউ।
জারিন দিয়া নামে এক নেত্রী লিখেছেন, সাজুগুজু করে প্রোগ্রামে যেতে পারেননি বলে শোভন তাকে পদ দেননি। জেসমিন নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘নারীদের বিবাহিত হওয়া ও আন্ডারগ্রাউন্ড প্রটোকল দেয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে বড় পোস্ট পাওয়ার মূলমন্ত্র।’ ছাত্রলীগ নেত্রীদের এমন বিষ্ফোরক সব মন্তব্যে সরগরম এখন গোটা সামাজিক মাধ্যম।