অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে (আইআইইউসি) পরীক্ষায় ফেল করায় পাশ করিয়ে দেওয়ার অনৈতিক দাবিতে শিক্ষকদের রুম ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগ। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষকরা। এর প্রতিবাদে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়েরে সব ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষকরা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৮ মে বুধবার বিকেল বেলা হঠাৎ করেই আইআইইউসির ইইই ডিপার্টমেন্টে হানা দেয় ঐ ডিপার্টমেন্টের কতিপয় শিক্ষার্থী। তারা ছাত্রলীগ পরিচয়ে শিক্ষকদের কাছে পরীক্ষায় ফেল করার কারণ জানতে চায় এবং তাদের পাশ করিয়ে দেয়ার অনৈতিক দাবী করে। শিক্ষকরা এ ব্যাপারে বিব্রতবোধ করলে ও তাদের এমন আচরণ থেকে বিরত থাকার আহবান জানালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের রুম ভাংচুর ও ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যানকে তার অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
এ পরিস্থিতিতে ফ্যাকাল্টি ডীন প্রফেসর ড. দেলওয়ার হোসেন শিক্ষকদের সাথে এমন আচরণ থেকে তাদের বিরত থাকতে বললে তারা তাঁর ওপরও চড়াও হয় এবং সন্ধ্যার পর তাঁর বাসভবনে গিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে শিক্ষক হোস্টেলের গেইট খুলতে গিয়ে সিকিউরিটির সাথে ধস্তাধস্তিতে তাদের একজনের হাতও সামান্য আহত হয়। এই হাত কাটাকে কেন্দ্র করে পরদিন ৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন করে ছাত্রলীগের ব্যানারে একাংশ।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা শাখাওয়াত শাওনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তাদের প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের ডলারের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। এর প্রেক্ষিতে তারা ভিসি বরাবর দোষীদের শাস্তি দাবী করে স্মারকলিপি দিয়েছেন ও মানববন্ধন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোস্যাল মিডিয়ায় একজন ছাত্রের আহত হওয়ার কথা শোনা গেছে, কিন্তু এরকম কোন ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে তারা জানেন না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান , ছাত্রদের একটা গ্রুপ তাদের সহপাঠী আহত হওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য উনার কাছে নাই।
গত ৯ মে ছাত্রলীগ আহুত মানববন্ধনে উপস্থিত না হওয়ায় আবাসিক হলের ইইই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র নোমান হোসাইনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে তাঁকে মেডিকেল ভর্তি করা হয়।
এদিকে গত ৮ মে শিক্ষকদের লাঞ্চিত করা, অনৈতিকভাবে পরীক্ষার পাশ করে নেয়ার জন্য শিক্ষকদের হুমকী ধামকী দেয়া ও ডিপার্টমেন্ট ভাংচুরের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকবৃন্দ। তারই প্রেক্ষিতে তারা শনিবার ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ আতংক ও শিক্ষাজীবনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। তারা মনে করেন একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি শিক্ষার্থীদের জীবনকে হুমকীর মুখে ফেলবে।
উল্লেখ্য যে, গত ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৪০-৫০ জনের একটা গ্রুপ হলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে এবং বৈধ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের মাধ্যমে হল থেকে বের করে দেয়।