অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশের অর্থনীতির মূল চাকাকে সচল রাখতে যারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা হলেন পোশাক শ্রমিক। দেশে রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে পোশাক খাত থেকে। আর এই খাতের খেটে খাওয়া শ্রমিকরাই হলেন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, লাঞ্ছিত ও অধিকার বঞ্চিত।
দেশের গার্মেন্টস মালিকরা পোশাকখাত থেকে আয়ের টাকা নিয়ে রাখছেন বিদেশের ব্যাংকে। বিদেশে গড়ে তুলেছেন বাড়ি-গাড়ি অট্টালিকা। অথচ যাদের শ্রমের বিনিময়ে আজ তারা হাজার কোটি টাকার মালিক, সেই শ্রমজীবী লোকগুলোকে তারা সঠিক পারিশ্রমিক দিচ্ছে না। বর্তমানে দেশে সবচেয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছে পোশাক শ্রমিকরা। ন্যায্য বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য রাস্তায় নামলেও উল্টো মামলা-হামলা, গ্রেফতার-হয়রানির শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারও সব সময় মালিকদের পক্ষে কাজ করে।
দেখা গেছে, গত বছর বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করেছিল পোশাক শ্রমিকরা। তাদের দাবির আলোকে গার্মেন্টস মালিকরা বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। এনিয়ে সরকার নতুন বেতন মজুরি কাঠামো ঘোষনা করে। কিন্তু, বেতন বৃদ্ধির নামে যে সরকার শ্রমিকদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছে সেটি এখন বেরিয়ে আসছে। এনিয়ে টিআইবি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
টিআইবি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৩ সালের ঘোষিত মজুরি অনুযায়ী প্রথম গ্রেডে ছিল ৮ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঘোষিত প্রথম গ্রেডে নতুন মজুরি করা হয় ১০ হাজার ৯৩৮ টাকা।
কিন্তু ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে মজুরি হওয়ার কথা ছিল ১৩ হাজার ৩৪৩ টাকা। সেই হিসাবে মজুরি দুই হাজার ৪০৫ টাকা বা ২৮ শতাংশ কমেছে। এভাবে নতুন কাঠামোতে মজুরি সার্বিকভাবে ২৬ শতাংশ কমেছে। মালিকপক্ষ মূল মজুরি বৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তা গড়ে ২৬ শতাংশ কমে গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, আইন অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির সঙ্গে ৩৬ শতাংশ বাড়ানোর কারণে ৭ম গ্রেডে মূল মজুরি দাঁড়ানোর কথা ৫ হাজার ২০৭ টাকা। কিন্তু এই গ্রেডে মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১০০ টাকা, যা কাঙ্খিত পরিমাণের চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম। এভাবে প্রতিটি গ্রেডে গড়ে ২৬ শতাংশ মূল মজুরি কমেছে।
টিআইবি বলেছে, ভারতে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি ১৬০ মার্কিন ডলার, কম্বোডিয়ায় ১৯৭, ফিলিপাইনে ১৭০, ভিয়েতনামে ১৩৬ ও বাংলাদেশে ১০১ ডলার। মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) বিবেচনায় বাংলাদেশের মজুরি হওয়া উচিত ২০২ ডলার, যা মাসে ১৭ হাজার টাকার সমান। এখন আছে ৮ হাজার টাকা।
টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এনিয়ে সব মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সচেতন মানুষ বলছেন- পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে সরকার বড় ধরণের প্রতারণা করেছে। সরকার দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদেরকে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে আর খেটে খাওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। এই শ্রমিকরাই হলো রাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কারণ, পোশাকখাত ধসে পড়লে দেশের অর্থনীতির চাকাও বসে পড়বে।
বিশিষ্টজনেরাও বলছেন, সরকারপন্থী কিছু ব্যবসায়ী নেতাদের কারসাজিতে এমনটা হয়েছে। সরকারকে তারা এককালীন মোটা অংকের ডোনেশন দিয়েই বেতন বৃদ্ধির নামে এই ভয়াবহ প্রতারণা করেছেন।