অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসছে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি। পর্দার আড়ালে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সমঝোতার আলোচনা হচ্ছে, এমন খবর বেশ কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে বিএনপির নির্বাচিত ৬ জন এমপি শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার শর্তে সরকার খালেদা জিয়াকে প্যারোলে বা জামিনে মুক্তি দিতে পারে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে প্যারোলের বিষয়টিকে বার বার প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার শর্তে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আর বিএনপির দাবি হলো-প্যারোলে নয়, খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত সংসদের মতো এবারও আওয়ামী লীগ একদলীয় সংসদ নিয়ে চরম বেকায়দায় আছে। জাতীয় পার্টিকে কাগজে-কলমে বিরোধী দলের আসনে বসানো হলেও মূলত: দলটি সরকারি জোটেরই অংশ বিশেষ। আর জাতীয় পার্টিও নিজেদের ইচ্ছায় বিরোধী দলের আসনে বসেনি। এক প্রকার সরকারের চাপের মুখে পড়েই তারা বিরোধীদলের আসনে বসতে বাধ্য হচ্ছে।
অপরদিকে, বিদেশিরা সরকারের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিলেও সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদল না থাকায় বিষয়টি খুব ভালভাবে নিচ্ছে না। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি সংসদের বাইরে থাকার বিষয়টিকেও বিদেশিরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। আর প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রতো এখনো তাদের দাবিতে অবিচল যে, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এসব কারণে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ খুব অস্বস্তিতে আছে।
সরকার মনে করছে, বিএনপির আসন সংখ্যা যা-ই হোক দলটি যদি সংসদে আসে তাহলে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন উঠবে না। কেউ আর সংসদকে একদলীয় সংসদ বলতে পারবে না। তাই বিএনপির নির্বাচিত ৬ জনকে সংসদে আনতে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা বিএনপিকে টোপ দিয়েছে- যদি আপনারা সংসদে আসেন তাহলে দলীয় প্রধানকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হবে।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নির্বাচিত এমপিরাও সংসদে যেতে রাজি। তারাও চান খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে সংসদে যেতে। আর এক্ষেত্রে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন জাতীয় ঐক্যের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। যদিও বিএনপি নেতারা এসব কথাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের বক্তব্যেও এসবের কিছু আভাস পাওয়া গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হলে সরকার তা বিবেচনা করবে। আর নাসিম বলেছেন, সংসদে এসে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলুন, লাভ হতেও পারে।
নাসিমের বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার যে, কোনো আইনি জটিলতার কারণে খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ নয়। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার চাচ্ছে না তাই খালেদা জিয়াও মুক্তি পাচ্ছেন না। সরকার মূলত চাচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে ভোট ডাকাতি হয়েছে সেটার বৈধতা আদায় করতে। এখন দেখার বিষয়- খালেদা জিয়া কি বাইরের আলো বাতাস দেখার জন্য ভোটা ডাকাতির বৈধতা দেবেন নাকি কারাগারেই থাকবেন। তবে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া এসব প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।