অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আবারো চরম বেকায়দায় পড়েছে সরকার। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক অস্ত্রধারী যুবক স্ক্যানিং আর দেহ তল্লাশির মধ্য দিয়েই বিমানে উঠে যায়। শাহজালাল থেকে বিমানটি উড়াল দেয়ার পর দুবাইগামী বিমানটিকে ছিনতাই করার চেষ্টা করে ওই অস্ত্রধারী যুবক। এরপরই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও বিষয়টিকে খুব ফলাও করে প্রচার করেছে। এঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়ে সরকার। সবশেষে ভাবমূর্তি রক্ষায় সরকার চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। হঠাৎ করেই মধ্যরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বলায় হয় যুবকের হাতে খেলনা পিস্তল ছিল। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। পরে সরকারের এই বক্তব্য নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠে।
কিন্তু, ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার সকালে আবারো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরণের প্রশ্নের মুখে পড়েছে সরকার। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের আহ্বায়ক ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ভুল করে তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি ব্যাগে করে বিমানবন্দরে চলে আসেন। কিন্তু, স্ক্যানিং মেশিনে দিলেও সেটা ধরা পড়েনি। পরে ইলিয়াস কাঞ্চন নিজ থেকেই বিষয়টি নিরাপত্তা কর্মীদেরকে জানালে এনিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে স্ক্যানিংয়ের দায়িত্ব থাকা ৫ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এনিয়ে আবার সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ সরকারের ওপর প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।
কিন্তু, ঘটনার একদিন পর বিমান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, ওই ঘটনা প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন অসত্য কথা বলছেন। মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইলিয়াস কাঞ্চনের ল্যাপটপের ব্যাগে থাকা পিস্তল ও গুলি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের অ্যান্টি হাইজ্যাকিং পয়েন্টে স্ক্যান করার সময় তা মেশিনে শনাক্ত হয়। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি তাঁর ভুল স্বীকার করেন। তখন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা তাঁকে বিমানবন্দরের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিস্তলটি বহন করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি ওই স্থান থেকে ফেরত যান। পরবর্তী সময়ে তিনি (কাঞ্চন) যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিমানে চট্টগ্রামে যান।
আর মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্যকে অসত্য ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেছেন, স্ক্যানিং মেশিনে তার পিস্তলটি ধরা পড়েনি। তিনি নিজ থেকেই কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। বিমানবন্দরের ওই সময়ের সিটি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশেরও দাবি করেছেন তিনি।
এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলে কার দাবি সঠিক? সরকার নাকি ইলিয়াস কাঞ্চনের?
তবে, এ ঘটনায় ৫ কর্মীকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার ও তদন্ত কমিটি গঠনের ঘটনা প্রমাণ করে ইলিয়াস কাঞ্চনের দাবি সঠিক। বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক গণমাধ্যমকে বলেছেন, পিস্তল সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরের স্ক্যানিং মেশিন পার হওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নাম এখনই প্রকাশ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাতেই বরখাস্ত করা হয় বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিনের দায়িত্বে থাকা পাঁচ কর্মীকে।
এখন এনিয়ে জনমনে দুইটি প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছে। প্রথমত: ইলিয়াস কাঞ্চনের দাবি যদি অসত্য হয়ে থাকে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে স্ক্যানিং মেশিনের দায়িত্বে থাকা পাঁচ কর্মীকে বরখাস্ত করা হলো কেন? কিসের ভিত্তিতে তাদেরকে বরখাস্ত করা হলো। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো- বুধবার সকালে ঘটনা ঘটলেও সারাদিন সরকারের পক্ষ থেকে কেন বলা হয়নি যে, ইলিয়াস কাঞ্চন অসত্য বলেছেন। দুইদিন বিষয়টি চাপা দিয়ে রাখা হলো কেন?
বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ মনে বলছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও এনিয়ে সরকার ইমেজ সংকটে পড়বে। এজন্য সরকার বিমান ছিনতাইয়ের মতো ইলিয়াস কাঞ্চনের ঘটনাটিও চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। তবে, মিথ্যাচারের মাধ্যমে বারবার এসব ঘটনা চাপা দিলে সমস্যা আরো দেখা দিতে পারে। এজন্য সরকারের উচিত হবে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।