অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে এখন জামায়াতে ইসলামী। দলটির সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো রঙ মাখিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। পাঠকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমগুলো জামায়াতে মতবিরোধ, ভেঙ্গে যাচ্ছে জামায়াত, জামায়াতে বিভক্তি, দুই ভাগ হয়ে যাচ্ছে জামায়াত, এমন আরও আকর্ষণীয় শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে।
সর্বশেষ রোববার দৈনিক যুগান্তরের অনলাইনে জামায়াতের আমির তার পদে থাকতে চাচ্ছেন না মর্মে দীর্ঘ একটি নিউজ করেছে।
দলের যেকোনো বিষয়ে নিজস্ব মতামত দেয়ার অধিকার আছে জামায়াত নেতাকর্মীদের। কেউ যদি মনে করে যে তিনি আর জামায়াতে ইসলামীতে থাকবেন না তাহলে জামায়াত তাকে কখনো জোর করে আটকে রাখেনি। মাওলানা আব্দুর রহিম জামায়াত ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, জামায়াত তাকে জোর করে ধরে রাখেনি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। তার অভিযোগ, দল তার মতামত গ্রহণ করেনি। তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে অন্য আর কোনো অভিযোগ আনতে পারেন নি। জামায়াতও তার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগে জামায়াত নেতাকর্মীরা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু, তার পদত্যাগের প্রভাব জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর পড়েনি। তিনি যাতে আবার ফিরে আসেন তার জন্য জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা দোয়া করছে।
আর দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার একটি ইউনিয়নের জামায়াত সেক্রেটারি বখতিয়ার পদত্যাগ করেছেন। দেশের গণমাধ্যমগুলো এটাকে খুব ফলাও করে প্রচার করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের কঠিন চাপে পড়ে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে বাধ্য করেছে এই ঘোষণা দেয়ার জন্য। গণমাধ্যমগুলো এটাকে ফলাও করে প্রচার করলেও জামায়াত নেতাকর্মীরা এটাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।
এরপর শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু জামায়াত-শিবিরের একটি অংশকে নিয়ে নতুন দল গঠন করছে বলে অতিউৎসাহী গণমাধ্যমগুলো নিজেদের মতো করে ডেস্কে বসে সংবাদ প্রকাশ করছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই মঞ্জুকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জামায়াত। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে আসছিলেন। যা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। তাকে দীর্ঘদিন ধরেই দলের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হাচ্ছিলো। কিন্তু তিনি এসবকে কোনো পাত্তাই দেননি। সর্বশেষ তার সদস্যপদ বাতিল করতে জামায়াত বাধ্য হয়। অতএব, তার ডাকে সারা দিয়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা নতুন দল গঠন করবে এটা কোনো পাগলেও বিশ্বাস করে না।
কিন্তু, কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমগুলো জামায়াতের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট নিউজ করে যাচ্ছে। জামায়াতকে নির্মূল করতে তারা দীর্ঘদিন ধরেই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অসত্য সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু, দলকানা মিডিয়া কখনো সফল হতে পারেনি। সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়ে হলুদ সাংবাদিকগুলো এখন জামায়াতের অভ্যন্তরে ভাঙ্গন সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। ভিত্তিহীন কাল্পনিক নিউজ প্রচার করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
এ সম্পর্কে একজন জামায়াত নেতা বলেন, হলুদ সাংবাদিক আর সম্পাদকরা একথা জানে না যে, জামায়াতে ইসলামী সাগরের কোনো ভাসমান ফেনার মতো নয়। এটা হিমালয় সম একটি পাহাড়। ঝড়-বৃষ্টির কারণে এই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে কিছু মাটি সরে গেলেও শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠা এই পাহাড়ের বিন্দুমাত্র কোনো ক্ষতি হবে না। তারা জামায়াত ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র যতই করুক না কেন কখনো সফল হবে না। জামায়াত নেতাকর্মীরা অতীতে ঐক্যবদ্ধ ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।