একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির পাঁচজন নির্বাচিত হননি, তাদের বিজয়ী দেখানো হয়েছে- দেশবাসী এমনটাই মনে করেন। তবে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে দুইটি বিষয়। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবির পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দলমত সকলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। অবিলম্বে বা বিলম্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে এদেশের মানুষ। বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এসব কথা বলেছেন। বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা সংসদে যাবেন কিনা- সম্প্রতি কূটনীতিকদের এমন এক প্রশ্নের প্রসঙ্গ টেনে সোমবার একটি বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। তার সে বক্তব্যের প্রেক্ষিত, নির্বাচন ও একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু নিয়ে দৈনিক মানবজমিনের কয়েকটি প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তরে এসব কথা বলেছেন ড. মঈন খান। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটের হিসাবনিকাশ নয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার মাধ্যমেই পুলিশ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে জয়-পরাজয়।
ড. মঈন খান বলেন- ‘আমাকে কয়েকজন রাষ্ট্রদূত প্রশ্ন করেছিলেন, আচ্ছা বিএনপির তো পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন।
তাহলে সেই পাঁচজন কী সংসদে যাবে না?’ যখন কূটনীতিকরা আমাকে এমন প্রশ্নটি করেছিলেন তখন বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত দেখানো হয়েছিল পাঁচজন। পরে অবশ্য আরো একজনকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। তো, জবাবে আমি বললাম- ‘কেউ যদি সত্যি সত্যি নির্বাচিত হয় তাহলে তারা সংসদে যাবে না কেন? কিন্তু আপনারা কি জানেন না বিএনপির পাঁচজন নির্বাচিত হয়নি, তাদেরকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। তাদের সংসদে যাওয়ার কি রাইট আছে? যদি সেই প্রশ্নের জবাব দেন তাহলে নিশ্চয় বিএনপির পাঁচজন সংসদে যাবেন।’ বিএনপির এই নীতিনির্ধারক কূটনীতিকদের বলেছেন- ‘আসলে এই নির্বাচনে কে জয়ী কে বিজয়ী- সেটা কোনো প্রশ্নই নয়। নির্বাচনে যাদের জয়ী দেখানো হয়েছে তারাই জয়ী হয়েছেন, যাদের পরাজিত দেখানো হয়েছে তারাই পরাজিত হয়েছেন। এটাই হচ্ছে মূল বিষয়। সেটা কেবল ভোট রিগিংয়ের মাধ্যমেই নয়, বরং সন্ত্রাসের মাধ্যমেও করা হয়েছে।
যার বিস্তৃত বিবরণ বিশ্বের প্রত্যেকটি নামিদামি মিডিয়াতে বিস্তারিত আকারে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।’ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রশ্নে নতুন কোনো উপলব্ধি করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মঈন খান বলেন, ‘এবার নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের পেছনে অনেক যুক্তি ছিল। তদুপরি এই নির্বাচনের মাধ্যমে দুটি জিনিস স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমত, আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীনে এদেশে কোনোদিনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। দ্বিতীয়ত, ২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিকও বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।’ বিএনপি এখন কি করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির নীতিনির্ধারক ফোরামের এই সদস্য বলেন, ‘বিএনপি এ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। একই সঙ্গে অবিলম্বে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
পাশাপাশি বিরোধী দলের ওপরে সরকারের সীমাহীন নির্যাতন ও মামলা-হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়ে এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।’ বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা একটি সঠিক পথে ফিরবে বলে মনে করেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মঈন খান বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হলে সর্বাগ্রে যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে, এদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক আদর্শে পুনর্গঠন করা। আমি বলবো, জাতির সামনে দলমতনির্বিশেষে সবার জন্য এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর পৃথিবীর ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, কোনো স্বৈরাচারই চিরদিন টিকে থাকতে পারে না। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মানুষ যারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আদর্শে একাত্তর সালে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল তারা পুনরায় এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। তা অবিলম্বেই হোক বা বিলম্বে।’
বুধবার প্রথম অধিবেশনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের- এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর বিএনপির যে কয়জনকে বিজয়ী দেখানো হয়েছে তারাও শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। প্রকৃত বিরোধী দলহীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ তার রাবার স্ট্যাম্প দায়িত্ব শুরু করেছে। একাদশ সংসদে আজকে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। তারা হচ্ছেন ভুয়া ভোটের প্রতিনিধি।’
সূত্র: মানবজমিন