অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মাঝে মাঝে আসলেই কষ্ট হয়, দ্বিধায় পড়ে যাই যে কার কাছে গিয়ে নালিশ করবো। যারা আমাদেরকে সবসময় দুর্নীতির ব্যপারে নসীহত করেন তাদের দুর্নীতির চিত্র যখন সামনে চলে আসে তখন আসলে নিরুপায় হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায়ও থাকে না। আগে শুনতাম যে বাংলাদেশ সরকার নাকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে যাতে এদেরকে দেখিয়ে বিশ্ব দরবার থেকে কোটি কোটি ডলার নিয়ে আসা যায়। দাতা সংস্থাগুলোও বরাবরই বাংলাদেশ সরকারকে অর্থ ব্যায়ের ব্যপারে সৎ ও স্বচ্ছ থাকার তাগিদ দিয়ে গেছে বরাবরই।
কিন্তু এবার দুর্নীতির অভিযোগ খোদ জাতিসংঘের আওতাধীন শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর বিরুদ্ধেই। মিডিয়াতেও এই সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই ব্যপারে তদন্তও শুরু করে দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
খবরে জানা যায়, বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর অফিস সম্প্রতি ৫৭টি বিলাসবহুল গাড়ি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই গোপনে নিয়ে এসেছে। এই গাড়িগুলোর জন্য যে উচ্চহারের কর দেয়ার কথা তাও তারা পরিশোধ করেনি। বরং বন্দরের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা এই গাড়িগুলো গোপনে বন্দর থেকে খালাস করেও নিয়ে এসেছে।
ইউএনএইচসিআর এর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, তারা বিভিন্ন গাড়িতে কুটনৈতিক সীল লাগিয়ে ব্যবহার করছে এবং এসব গাড়িকে অন্যন্য সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তাদেরকেও ব্যবহার করার সুযোগ দিচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতিমধ্যেই এই ব্যপারে তদন্ত শুরু করেছে বলে এনবিআরের চেয়ারম্যার মোশাররফ হোসেন ভুইয়াঁ সাংবাদিকদেরকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এই অনিয়মের ঘটনাটি একটি চিঠির মাধ্যমে তাদেরকে জানানোর পর তারা জরুরী ভিত্তিতে এই তদন্ত শুরু করেছেন।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা বা এর কোন কর্মকর্তা যদি করমুক্তভাবে কোন গাড়ি তার অফিসিয়াল কাজের জন্য নিয়ে আসতে চান তাহলে তাকে এর জন্য আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। সেই সাথে গাড়িটিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা এবং এর রেজিস্ট্রেশনের জন্যও কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু ইউএনএইচসিআর এই যাত্রায় ৫৭টি বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহারের জন্য এরকম কিছুই করেনি। বরং বিধি বহির্ভূতভাবে তারা ঢাকা শহরে গাড়িগুলোর ব্যবহারও শুরু করে দিয়েছে। গাড়িগুলোতে কোন রেজিস্ট্রেশন প্লেটও লাগানো হয়নি। ‘এএফআর বা এ্যাপলাইড ফর রেজিস্ট্রেশন’ শিরোনামের একটি প্লেট লাগিয়ে তারা দিনের পর দিন গাড়িগুলোকে ব্যবহার করছে যা কুটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং কুটনৈতিক সুবিধার অন্যায্য অপব্যবহার।
এর আগে ইউএনএইচসিআর আরো ৭২টি গাড়ি কুটনৈতিক কাজে ব্যবহারের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে। হলুদ রং এর বিশেষ নেমপ্লেটে এই গাড়িগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই গাড়িগুলোর অধিকাংশতেই ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তারা বসেন না। বরং বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তারাই এই গাড়িগুলো ব্যবহার করেন। জানা গেছে, ইউএনএইচসিআর কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যেই অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরকে এই গাড়িগুলো ব্যবহার করতে দিচ্ছে।
এই ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে ইউএনএইচসিআর এর মুখপাত্র জোসেফ সূর্যমনি এক ইমেইলে জানান, তারা গত জুন মাসে ৫৭টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তাদেরকে নতুন করে কোন গাড়ির নিবন্ধন দিচ্ছেন না কেননা মন্ত্রনালয়ের কাছে তথ্য আছে যে ইউএনএইচসিআর এসব কুটনৈতিক নিবন্ধনপ্রাপ্ত গাড়িগুলোকে নামে বেনামে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করার অবৈধ সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এমন বার্তা পাওয়ার ইউএনএইচসিআর নতুন করে ৫৭টি গাড়ি আনার অর্ডার বাতিল করার উদ্যেগ নেয়। কিন্তু ততদিনে ৪৬টি গাড়ি দেশে চলে আসায় এখন গাড়িগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এই গাড়িগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য এখনও চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জোসেফ জানান।
যে যাই বলুক না কেন, শেষ কথা হলো, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর শুধু নয়, এটা এখন ওপেন সিক্রেট যে আন্তর্জাতিক বহু সংস্থাই বাংলাদেশে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার নামে বড় আকারের দুর্নীতি করে যায়। বিদেশী নাগরিক হওয়ায় আইনগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠেনা বিধায় এসব উন্নয়নকর্মীরা বার বার এধরনের অপরাধ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বলেও বিশ্লেষকরা অভিমত ব্যক্ত করেন।