অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধায় সাধারণ মানুষ ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। সরকারের অনুগত নির্বাচন কমিশন, র্যাব-পুলিশ, সেনাবাহিনী, সরকারের গৃহপালিত কিছু বুদ্ধিজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ বললেও এনিয়ে বিস্মিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক মহল। দেশের ভেতরও সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন, বুদ্ধিজীবী মহল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছেন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে ভোট ডাকাতির এক ভয়াবহ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্য থেকে দ্বৈবচয়নের (লটারি) ভিত্তিতে ৫০টি বেছে নেয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৭টি আসনেই তারা গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টির মধ্যে ৪১টি আসনে জাল ভোট; ৪২টি আসনে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা; ৩৩টি আসনে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল; ২১টি আসনে আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো বা কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা; ৩০টি আসনে বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট; ২৬টি আসনে ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা; ২০টিতে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখা; ২২টিতে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া; ২৯টিতে প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ তারা পেয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টি আসনে মোটামোটি সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। এ হিসাবে ৩০০ আসনের মধ্যে সুষ্ঠু ভোটের হার হবে ১২টি আসনে। আর ২৮৮টি আসনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। অপরদিকে নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রাপ্ত আসন সংখ্যাও ২৮৮টি। অর্থাৎ ব্যাপক ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যে আওয়ামী লীগ ২৮৮টি আসন তাদের দখলে নিয়ে এটা এখন প্রমাণিত।
এদিকে, নির্বাচন নিয়ে টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর সারাদেশে হৈচৈ পড়ে গেছে। কথিত সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। আর নিজেদের ইজ্জত বাঁচাতে তড়িগড়ি করে একটি বিবৃতি দিয়ে সরকারের অনুগত নির্বাচন কমিশন দাবি করছে-টিআইবির প্রতিদেবন নাকি পূর্ব নির্ধারিত।
তবে বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের কথিত সুষ্ঠু নির্বাচনের মুখোশ উম্মোচিত হয়েছে। টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদন ও ২৯৮ আসনের প্রার্থীদের দ্বারা সংগৃতীত ভোট ডাকাতির তথ্য প্রমাণ নিয়ে বিএনপি জোট শক্তভাবে দাঁড়াতে পারলেই সরকার বেকায়দায় পড়ে যাবে। ব্যাপক ভোট ডাকাতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতেছে সেটা এখন প্রমাণিত। তবে, সরকার নির্বাচন বাতিল করবে কি করবে না সেটা নির্ভর করছে বিএনপির ভুমিকার ওপর। বিএনপি এই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে কতটুকু শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।