অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের জনগণ হঠাৎ করেই একটু চমকে গেলো দুদিন আগে। যেখানে বাংলাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগের কোন জনপ্রিয়তা দৃশ্যমান নয়। পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় একচ্ছত্র প্রচারণার উপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ জনমানুষকে রীতিমতো আতংকের সাগরে ডুবিয়ে রেখেছে, ধানের শীষসহ বিরোধী কোন প্রার্থীর পোস্টার যখন দেখা যায়না, যখন প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ জন প্রার্থীসহ অসংখ্য বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হচ্ছে, যখন বিরতিহীনভাবে বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করে আওয়ামী লীগের ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার রাস্তা পরিস্কার করা হচ্ছে ঠিক তখনই সরকার দলীয় মিডিয়াগুলো অদ্ভুত এক জরিপ ফাঁস করলো। সেই জরিপে দেখা গেল আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে, শুধু ক্ষমতায় আসছে তাই নয়, ২৪৮ টি আসন পেয়ে তারা ক্ষমতায় আসছে। আর বিরোধী জোট নাকি পাবে মাত্র ৪৯টি আসন।
অদ্ভুত সেই জরিপ একাত্তর টিভি, এটিএন নিউজসহ দালাল মিডিয়াগুলো সারাদিন ধরে প্রচার করলো। জরিপটি করেছে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার বা আরডিসি নামক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির অর্থনীতিবিদ ফরেস্ট ই কুকসন গত বুধবার রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরেন। এই বিদেশীকে সামনে রাখার উদ্দেশ্য হলো যাতে মানুষ এই জরিপটির ফলাফলকে গ্রহনযোগ্য বলে মেনে নেয় এবং আওয়ামী লীগের বিজয়ের ব্যপারে আগে থেকেই আস্থাভাজন হয়ে ৩০ তারিখের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষেই ভোট প্রদান করতে উৎসাহিত হয়।
কিন্তু বিধি বাম! সেই আশায় গুড়ে বালি। নির্বাচনের দুদিন আগেই এই জরিপের আসল রহস্য ফাঁস হয়ে গেলো। এই জরিপটি আসলে পাতানো। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যমুলকভাবে এই জরিপে বিজয়ী দেখানো হয় যা মাঠের চিত্রের একেবারেই বিপরীত। আর এই জরিপটি করিয়েছে আওয়ামী লীগ নিজেই। আওয়ামী লীগের অঘোষিত অর্থ সম্পাদক সালমান এফ রহমান যিনি দরবেশ হিসেবে বহুল পরিচিত তিনি এই জরিপটি করার জন্য বিপুল পরিমান টাকা ব্যায় করেছেন। সেই সাথে অর্থনীতিবিদ কুকসনকেও বিরাট অংকের টাকা দেয়া হয় যাতে তিনি নিজে সরাসরি এই জরিপটি মিডিয়ার সামনে ফাঁস করেন। এমনকি সালমান এফ রহমানের হাতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা থাকা স্বত্বেও ব্যপারটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তিনি নিজের মিডিয়ায় না এনে বুধবার রাতেই কুকসনকে দিয়ে একাত্তর টিভিতে আরেকটি বাড়তি সাক্ষাতকার প্রচারেরও ব্যবস্থা করেন। তবে এত সব কিছু করার পরও গোটা জালিয়াতিটা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে।
ওয়েস্টিনের সেই আলোচিত সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করার দায়িত্বে ছিলো ইমপ্যাক্ট পিআর নামক একটি প্রতিষ্ঠান। তারাই প্রথম আলোসহ দেশের মুলধারার সব পত্রিকাকে এই গোমর ফাঁস করে দেয়। সালমান এফ রহমান সরাসরি টাকা না দিয়ে কুকসন এবং তার প্রতিষ্ঠানকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি ও পত্রিকার মারফত প্রদান করেন। আরডিসিকে বিশেষভাবে দুটো অনুরোধ করা হয়। প্রথমত যাতে তারা আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেজরিটিতে বিজয়ী দেখান আর দ্বিতীয়ত যাতে তারা এই অর্থ লেনদেনের বিষয়টা গোপন রাখেন। তবে আফসোস, কুকসন বিষয়টা চেপে গেলেও পিআর প্রতিষ্ঠানের বরাতে গোটা বিষয়টা এখন জনগণের সামনে একদম পরিস্কার হয়ে গেছে।
ইমপ্যাক্ট সলিউশনস তার অবস্থান জানিয়ে আজ মিডিয়াকে জানায়, বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট—এই দুটি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জরিপ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি)।
গত বুধবার রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচনের আগাম জরিপ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব পালন করা প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট পিআরের পক্ষ থেকে জরিপের অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
উল্লেখ্য, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন আওয়ামী লীগ সভাপতির বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন ওই দুটি গণমাধ্যম। তিনি এবার ঢাকা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিনি এখন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান।