জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার ‘দ্রুত’ আরেকটি নির্বাচন দেবে বলে অভিনয় করে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। অভিনয়ের জন্য সরকারকে অস্কার দিতে হয়।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। কামাল হোসেন বলেন, ‘এই সরকার আমাদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করতে পারে না। কোনোভাবেই পারে না। তারা কায়দা করে এই ইলেকশন দিচ্ছি দিচ্ছি বলে। ২০১৪ থেকে নাটক আমরা দেখছি। দিচ্ছি দিচ্ছি করে পাঁচ বছর কাটল। অভিনয় করার জন্য অভিনন্দন দিতে হয়। সত্যিই অস্কার দিতে হয়।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলে জানান কামাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রায় এক যুগ পরে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রার্থীদের ওপর পেশিশক্তি চালানো হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিজের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘এই রকম পরিস্থিতি আমার জীবনে দেখিনি।’
ব্যাংক খাতসহ অনেক দুর্নীতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, জনগণ যখন রাষ্ট্রের মালিক থাকে না, তখন রাষ্ট্রের মালিক হয়ে যায় কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। সীমাহীন দুর্নীতি চলছে। দুর্নীতির কোনো একটা নতুন শব্দ আবিষ্কার করতে হবে। এখন দুর্নীতি লক্ষ-কোটিতে নয়, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়।
আর গ্রেপ্তার করা হবে না, বলে সংলাপে প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংলাপে বলা হয়েছিল আর গ্রেপ্তার করা হবে না। কিন্তু তারপর কি একটা দিনও গেছে যে গ্রেপ্তার হয়নি? আর কয়দিন আছে? এই ১৩ দিনে এ রকম গ্রেপ্তার যদি বন্ধ না হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন কি হবে?’
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মতো ঐক্যফ্রন্টও রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন বলে মনে করে।। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিশ্বাস করে, ৩০ ডিসেম্বর মানুষ দলে দলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবে। ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করে ভোটের অনিয়ম রুখবে এবং ভোট শেষ হওয়ার পর নিজেদের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া দেখে বাসায় ফিরবে। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এক গণ-অভ্যুত্থানের দিন হবে ৩০ ডিসেম্বর।
এ পর্যন্ত ১৯০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, এটা জাতীয় লজ্জার বিষয়। পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেন গ্রেপ্তার না করা জন্য। বেআইনি হুকুম না মানার জন্যও অনুরোধ জানান।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ ইশতেহার মানুষের মৌলিক দাবি-দাওয়া উঠে এসেছে। তাঁদের ইশতেহার ‘বৈপ্লবিক ইশতেহার’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩৫ দফা অঙ্গীকারের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ইশতেহার পাঠ করেন জোটের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মোহসীন মন্টু, বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরউল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
সূত্র: প্রথম আলো