দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনী হামলার বিরুদ্ধে জন-প্রতিরোধ হবে। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দসহ দলের অঙ্গসংগঠনের এক যৌথ সভার পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা সরকার ও সরকারি দলের লোকরা পুলিশের সহযোগিতায় কিংবা পুলিশের ছত্রছায়ায় যে নির্যাতন ও অন্যায় আচরণটা করছে আমরা তার নিন্দা জানাই। তাদের এই আচরণ আমাদেরকে ভীতি সন্ত্রস্ত করছে না। আমরা কী করবো- এটা যদি জানতে চান তাহলে আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে আক্রমন করার পরে যা হয়েছে, সেখানে যেভাবে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আমরা সারাদেশে সেটা করার চেষ্টা করবো। আমরা আশা করছি সারাদেশে এটাই ঘটবে।
নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিবের নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দল পু্লেিশর ছত্রছায়ায় হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, বেলা ১টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি মহাসচিব নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে সদর উপজেলাধীন বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় পৌঁছলে ওত পেঁতে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বনি আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের ছত্রছায়ায় সরকার দলীয় একদল সশ্বস্ত্র সন্ত্রাসী অতর্কিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গাড়ি বহরে আক্রমণ চালায়। তাদের হিংস্র হামলায় ১০/১২ জন নেতা-কর্মী আহত হয় এবং বেপরোয়া আক্রমন চালিয়ে তারা ১০/১২টি গাড়িও ভাংচুর করেছে প্রথম দিকে থম থমে অবস্থা ছিলো। আমি বলতে চাই, বেশি জায়গায় এই ধরনের ঝামেলা করা হলে আরো বেশি ঘটনা ঘটবে আর কি।
তিনি বলেন, নোয়াখালীর কবিরহাটে ধানের শীষের প্রার্থী মওদুদ আহমেদের নির্বাচনী পথসভা পন্ড করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। কবিরহাট উপজেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা চৌধুরী লিটন, উপজেলার প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মমিত ফয়সল, নরোত্তমপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ, জিসাস সভাপতি আবদুস সাত্তার, পৌর যুবদল সভাপতি মো. আলাউদ্দিন, রিপনসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মীরা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশ্বস্ত্র হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।
পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন জেলা বিএনপি নেতা মো. একরাম উদ্দিনকে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের কমপক্ষে ২৫টি বাড়ি-ঘর, দোকানপাঠ ভাংচুর করেছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী ক্যাডাররা এই ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। আপনারা শুনলে কী যে, যা কিছু অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগের লোকেরা আর গ্রেফতার হয়েছে বিএনপির নেতা। বগুড়া- ৫ আসনে জিএম সিরাজের গাড়িবহরে পুলিশের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশ্বস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নজরুল।
গণমাধ্যমের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা জানেন এবং দেখেন। সব কথা লিখতে পারেন কি পারেন না সেটা আপনারাও বুঝেন। ছবি তুলেন আপনারা আজ-কাল তো ফিল্ম লাগে না, মুছে ফেলানো যায় আরকি। অনেক ছবি তুলেন আপনারা। কিন্তু ছবিগুলো প্রকাশ বা প্রচার করতে পারেন না অনেকটাই নানা ঝামেলার কারণে।
আপনারা যদি চুপ মেরে যান তাহলে আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নাই। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনও নাই। কাজে কার ওপরে আর ভরসা করা যাবে। আপনারা যারা সত্য সন্ধানী, আপনারা সত্য কথা জনগনকে জানতে দিন- এই অনুরোধ আপনাদের কাছে। ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক নাদিমসহ কয়েকজনকে মোস্তফা মহসিন মন্টুর বাসা থেকে বেরুনোর পর গ্রেফতারসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতারের একটি পরিসংখ্যানও দেন তিনি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা-৯ আসনে আফরোজা আব্বাস, ঢাকা-৪ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ, গাজীপুর- ২ আসনে সালাহ উদ্দিন সরকার ও গাজীপুর- ৪ আসনে শাহ রিয়াজুল হান্নান, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে আবদুল হাই, ঢাকা-১৪ আসনে সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত