অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মানুষ তার জমিকে সম্ভাব্য শত্রুর ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে রাখে। কিন্তু সেই বেড়াই যখন সেই ক্ষেতটি খেয়ে ফেলে তখন আর যাওয়ার কোন জায়গা অবশিষ্ট থাকেনা। এরকমই ঘটনা অহরহ ঘটছে বাংলাদেশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- যার কাজই হলো মানুষকে রক্ষা করা, নিরাপত্তা দেয়া, তারাই যেন এখন ফ্রাংকেনস্টাইনের দানবের ভুমিকায়। নিরাপত্তা চাইতে গিয়ে মানুষ তাদের কাছে গিয়ে যেন আরো বেশী অনিরাপদ হয়। আর এখন তো নিখোঁজ বা লাপাত্তাই হয়ে যাচ্ছে।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাইফুর রহমান ঢাকায় এসে নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন ফোন করলে তিনি ঢাকায় আসেন। গত ২৭ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে তিনি মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে ঢোকেন। এরপর থেকে তাঁর আর খোঁজ মিলছে না।
এর আগে দলের মনোনয়নপত্র তুলতে ঢাকায় এসে লাশ হয়ে ফিরেছিলেন একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা আবু বকর (৬৫)। ১৯ নভেম্বর বুড়িগঙ্গায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। তখনও এই সাইফুর মেম্বার নিহত আবু বকরের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন।
সাইফুরের পরিবার ও সহকর্মীরা জানান, সাইফুরকে ডিবির কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন বারবার ফোন করে ঢাকায় আসতে চাপ দিলে তিনি তা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমানসহ অন্য মেম্বারদের জানান। চেয়ারম্যান আরেক মেম্বার আবদুল লতিফ গাজীকে সঙ্গে দিয়ে তাঁকে ঢাকায় পাঠান।
আবদুল লতিফ গাজী পরবর্তীতে মিডিয়াকে বলেন, ২৭ নভেম্বর ঢাকায় নেমে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা ডিবি কার্যালয়ে যান। সাইফুর এর মধ্যে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথাও বলেন। তাঁদের ১২টার দিকে ডিবির ফটকে থাকতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী তাঁরা ডিবি অফিসের মূল ফটকসংলগ্ন চালাঘরে অপেক্ষা করেন। কিছুক্ষণ পরে ভেতর থেকে একজন লোক এসে সাইফুরকে ডেকে নিয়ে যান। লতিফ গাজী বলেন, তিনিসহ আরও দুই ব্যক্তি সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তাঁদের রাস্তার অপর পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়। তিনি বলেন, ‘এরপর জোহর গেল, আসর গেল; সাইফুর আর আসে না। আমি গেটে যাই খোঁজ নিতে। আমারে কয়, ভেতরের খবর তারা জানে না। সন্ধ্যার পরে আমি চইলে আলাম। এরপর আর কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি।’
নিখোঁজ সাইফুরের ভাই হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে সাংবাদিকদেরকে বলেন, আবু বকরের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতি করতেন সাইফুর। তাঁর বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর হবে। তিনি অবিবাহিত। যদিও আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুড়িগঙ্গায় আবুবকরের লাশ পাওয়ার পর এই হত্যাকান্ডকে দলীয় কোন্দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু এবার সাইফুরকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে নিখোঁজ করে দেয়ায় এই ঘটনাগুলোর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার বিষয়টি আবারও সামনে চলে আসছে।
মজিদপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, তিনি নানাভাবে যোগাযোগ করে সাইফুরের খোঁজ জানতে পারেননি। তবে সম্প্রতি ডিবির হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া তিনজন রাজমিস্ত্রি তাঁদের ফোন করে জানিয়েছেন, সেখানে সাইফুরের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়েছে। তাঁরা বের হচ্ছেন জেনে সাইফুর তাঁদের কয়েকটি ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
সাইফুরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে না; করছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বলেন, ‘ডিবি কাউকে ডেকেছে কি না, তা জানি না।’ তার মানে ডিবি ও কেরানীগঞ্জ থানা এই ঘটনার দায় এড়ানোর জন্য এখন একে অন্যের উপর দোষ দেয়ার চেষ্টা করছে যা পরিবারের সদস্যদেরকে আরো বেশী আতংকিত করে তুলেছে।
উল্লেখ্য, যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু বকর দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার জন্য ১২ নভেম্বর সাইফুরসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। উঠেছিলেন পুরানা পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেলে। ১৮ নভেম্বর রাতে তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেল ছাড়েন। ১৯ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ। আর এবার ঢাকায় এসে ডিবি অফিসে গিয়ে নিখোঁজ হলেন তারই ঘনিষ্ঠ সহচর সাইফুর মেম্বার।