অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিগত দশ বছরের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। বেতন বৃদ্ধি ও পদন্নোতিসহ পুলিশের পক্ষ থেকে যখন যা আবদার করা হয়েছে সরকার সবই পূরণ করেছে।
বিশেষ করে আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, মহানগরগুলোর কমিশনার, ডিসি, এসপি ও ওসিদেরকে সরকার নজিরবিহীন সুযোগ সুবিধা দিয়েছে। শর্ত একটাই, অর্ডার মানতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন যা বলা হবে তাই মানতে হবে। যখন যাকে গুম বা হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হবে তাই মানতে হবে।
এছাড়া মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদেরকেও দেয়া হয়েছে অবাধ সুবিধা। গণহারে পদন্নোতি আর দফায় দফায় বেতন বৃদ্ধি। তাদের প্রতিও নির্দেশ ছিল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ অমান্য করা যাবে না। বিরোধীদলকে দমনে যখন যা বলা হবে তাই শুনতে হবে।
সরকারের অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা পেয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ভুলে গিয়েছে যে তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী। জনগণের নিরাপত্তা বাদ দিয়ে মেতে উঠেছে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে গুম হত্যার নেশায়।
তবে অনেক পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য হলো তারা শুধু চাকরি রক্ষার জন্য সরকারের এসব অনৈতিক আদেশ মেনে চলছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। চাকরি রক্ষা করতে হলে আদেশ মানা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তবে, বিগত দশ বছর ধরে মাঠ পর্যায়ের যেসব পুলিশ কর্মকর্তা শুধু চাপের কারণে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে, ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে তারা নিজেরাই এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আগামীতে ক্ষমতার হাত বদল হলে তাদের অবস্থা কী হবে সেটা নিয়ে এখন তারা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। এসব নিয়ে এখন পুলিশ হেড কোয়ার্টারেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
পুলিশের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আইজিপি, ডিআইজি, ডিএমপি কমিশনার ও ডিসি এসপিরা ওসি ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে। কিন্তু পুলিশের ভেতর বড় একটি গ্রুপ এ আদেশ মানতে নারাজ। উর্ধ্বতনদের ওপর তারা এখন চরম ক্ষুব্ধ। তাদের সাফ কথা, এবার নির্বাচন আর আগের মতো হবে না। আগের মতো এবার আর মানুষের ওপর গুলি করা সম্ভব হবে না। আমরা গুলি অনেক করেছি। আর না। এখন পারলে ডিআইজি ও ডিসি এসপিরা গুলি করুক।
এছাড়া পুলিশের ভেতর বড় একটি অংশ মনে করছেন এবার সরকারের পরিবর্তন হবে। বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এলে তারা বিগত দশ বছরের প্রতিশোধ নেবে। চাকরিতো থাকবেই না বরং জান বাঁচানোই তখন কঠিন হয়ে পড়বে। বিগত দিনে যা করার করেছি এখন আর না। তাদের বক্তব্য হলো শুধু আওয়ামী লীগকে নিরাপদে রাখলেই হবে না, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে।
ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, এসব নিয়ে পুলিশের ভেতর এখন চরম দ্বন্দ্ব চলছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্ব যেকোনো সময় প্রকাশ্যে চলে আসতে পারে। আর সার্বিক পরিস্থিতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের অনুকূলে চলে গেলে তখন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা উপরের আদেশ না মানতে পারে।
জানা গেছে, নিজেদের ভবিষ্যত নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ছুটির আবেদন করেছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কেউ ছুটি পাচ্ছে না।