অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনলাইনে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। এই অপপ্রচারে এবার নাম লিখিয়েছে স্বয়ং সরকারও। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি মূল গণমাধ্যমগুলোর নামে হুবহু ফেইক নিউজ সাইট তৈরি করে বিরোধী পক্ষের নামে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার করছে।
অনলাইনে সরকারের তরফ থেকে এমন অপপ্রচার চালানোর আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের এক বক্তব্য থেকেই। কিছুদিন আগে এক বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে ‘নামে-বেনামে’ ফেইসবুক আইডি খোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারই অংশ হিসেবে নামে বেনামে ওয়েবসাইট তৈরি করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এ পর্যন্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের নামে ফেইক নিউজসাইট তৈরি করতে দেখা গেছে। সেগুলো হলো- প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা ও বাংলা ট্রিবিউন। গণমাধ্যমগুলোর মূল ইউআরএলের সঙ্গে বাড়টি একটি দুটি অক্ষর যুক্ত করে এসব ফেইক সাইট তৈরি করা হয়েছে। মূল সাইটের ডিজাইনের হুবহু নকল করেই ফেইক সাইটগুলো তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউনের নামে তৈরি করা ফেইক সাইটটিতে ‘জামাত চায় ৭০ আসন। বিএনপি দেবে ৪৫!! ঐক্য দিয়ে কিছু হবে না – রিজভী’ শিরোনামে ভুয়া নিউজ করা হয়েছে। এই ভুয়া নিউজে বিএনপি নেতা রিজভী ও এক জামায়াত নেতার নামে মনগড়া উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রথম আলোকে হুবহু নকল করা সাইটটিতে ভুয়া নিউজ করা হয়েছে- ‘কামাল রাষ্ট্রপতি! তারেক রহমান হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী!’ শিরোনামে। এই নিউজেও বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
এছাড়া বিবিসি বাংলাকে হুবহু নকল করা ফেইক সাইটটিতে নিউজ করা হয়েছে ‘পল্টনে বিএনপির বিভক্তির আগুন’ শিরোনামে। এই ভুয়া রিপোর্টে বিএনপির কল্পিত দলীয় কোন্দলের কথা তুলে ধরে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের হামলাকে দেখানো হয়েছে দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হিসেবে।
এদিকে তিনটি গণমাধ্যমই তাদের মূল ওয়েবসাইটে ফেইক সাইটগুলো সম্পর্কে পাঠকদেরকে সতর্ক করে নিউজ করেছে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে তিনটি ফেইক ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রথম আলো আর বাংলা ট্রিবিউনের ফেইক সাইট দুটি একই সার্ভারে হোস্ট করা। অর্থাৎ সাইটগুলো যে একই স্থান থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে সেটা অনেকটাই স্পষ্ট।
সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, নির্বাচনের আগে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের অপপ্রচার চলতে পারে। অনলাইনে শক্তি বৃদ্ধিতে আপনাদের নাতি-নাতনিদের নামে-বেনামে একটার জায়গায় ১০টা কেন, প্রয়োজনে একশটা ফেইসবুক আইডি খুলতে বলুন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এইচ টি ইমামের আগাম বক্তব্যে স্পষ্ট অনলাইনে অপপ্রচারে ফেইক আইডি ও সাইট তৈরির পরিকল্পনা সরকারের আগে থেকেই ছিল। এখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তারা তার বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। সরকার তাদের এজেন্সিকে দিয়ে এসব অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
এদিকে খবরগুলো খুব দ্রুত ফেইক হিসেবে ধরা পড়ে যাওয়ায় সরকারের উদ্দেশ্য অনেকটাই ভেস্তে যাচ্ছে। সরকার যেখানে ফেইক নিউজ ও সাইটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে, সেখানে তারা নিজেরাই ফেইক নিউজ সাইট তৈরি করে বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটা খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।