ভারতের আসাম রাজ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ বাঙালিকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার প্রতিবাদে বাঙালিরা আজ শুক্রবার ১২ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে।
গতকাল রাতে পাঁচ বাঙালি খুনের পর স্থানীয় ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মনে করছে, রাজ্যে ফের বাঙালি নিধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পুলিশের সন্দেহ, জঙ্গি সংগঠন উলফা (স্বাধীন) এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তবে তারা হত্যার দায় অস্বীকার করেছে।
গ্রামবাসী বলছে, গত রাতে লুডু খেলছিলেন আসামের সাদিয়ার কাথে খেরিবাড়ির সুবল দাস, ধনাই নমসুদ্র, অনন্ত বিশ্বাস, শ্যামল বিশ্বাস ও অবিনাশ বিশ্বাস। এ সময় ফৌজি পোশাক পরা ৫ সশস্ত্র যুবক এসে তাঁদের ডাকে। বন্দুকের নলের মুখে তাঁদের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত ধলা-সৌদিয়া সেতুর কাছে যেতে বাধ্য করা হয়। সেখানেই লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়।
ঘটনার পর গোটা রাজ্যে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাঙালি ছাত্র ফ্রন্টের ডাকে তিনসুকিয়া জেলায় আজ পালিত হচ্ছে হরতাল।
ঘটনার নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানিয়েছে, দায়ী ব্যক্তিদের কঠোরহস্তে দমন করা হবে।
এর মধ্যে রাজ্যে সেনা ও পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য নেই।
বাঙালি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এমনকি আলোচনাপন্থী উলফা নেতারাও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে যথাযথ তদন্তের দাবি করেছে।
আলোচনাপন্থী উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড নিন্দনীয়। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করা জরুরি।’
নিন্দা করেছে কংগ্রেসও। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি রিপুন বরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এই হত্যাকাণ্ড সেটাই প্রমাণ করে।’
আসাম নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির নেতা সাধন পুরকায়স্থ বলেন, ‘বাঙালিদের হত্যালীলা শুরু হলো। আগেই অসমিয়ারা হুমকি দিয়েছিল। এখন শুরু হলো খুন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুয়াহাটির এক বাঙালি নেতা বলেন, ফের শুরু হলো বাঙালি নিধন। এর জন্য বিজেপিই দায়ী। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন, বাঙালিরা উইপোকা। এখন উইপোকা মারা শুরু হলো।
নিজেকে উলফার (স্বাধীন) মুখপাত্র বলে পরিচয় দিয়ে রুমেল নামের এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
তবে পুলিশের সন্দেহ, উলফার আলোচনা-বিরোধী স্বাধীন গোষ্ঠীই এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর গুয়াহাটিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাঙালিদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন উলফার সর্বাধিনায়ক পরেশ বড়ুয়া।
সূত্র: প্রথম আলো