অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একটা জিনিস খেয়াল করা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়টা ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসে, তার সবগুলোই সরকার বিরোধী মহলের, বিশেষত বিএনপি নেতাদের। কিংবা এভাবেও বলা যায়, এমন ফোনালাপগুলোই ফাঁস হয়েছে, যেগুলো থেকে সরকারের উপকার পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। যেমন কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মামুনের সাথে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের ফোনালাপ। যেটাকে পরবর্তীতে মিডিয়াতে এই মর্মে প্রচার করা হয়েছে যে, তারেক জিয়া ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাকে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চান। বিটিভিসহ জাতীয় গনমাধ্যমগুলোতে সেই ফোনালাপকে মারাত্মকভাবে ব্যবহার করেছে সরকার। ফলে ছাত্রদের সেই আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতির বীজকে ঢুকিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, ঠিক তেমনি সরকার সে যাত্রায় একটি বিরাট সংকট থেকে বেঁচেও গেছে।
এরপর যে ফোনালাপটা প্রকাশিত হয়েছে, সেটা হলো খালেদা জিয়ার আইনজীবী এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবি ও বর্তমান জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম কারিগর ডা. জাফরুল্লাহ খানের একটি ফোনালাপ। এই ঘটনাটিকেও মিডিয়া তার বিরুদ্ধে প্রচার করেছে এবং বলেছে ডা. জাফরুল্লাহ আইনজীবীদের আদালত বর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। আইনী প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে সহিংসতা করার উপদেশ দিয়েছেন। এই ফোনালাপেরও ব্যপক প্রচার করা হয় মিডিয়ায়। বিএনপি বেকায়দায় পড়ে যায়। আর তারই ডামাঢোলে জেলের ভেতর অবৈধ কোর্ট বসিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার বিচার করা অব্যহত রাখার সুযোগ পায়। আর গত সপ্তাহে তারেক জিয়াকে ২১ আগষ্ট মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে ভবিষ্যতে তারেক জিয়ার বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনাকেও সরকার অনেকটাই সংকুচিত করে দেয়।
সর্বশেষ গতকাল রাতে মাহী বি চৌধুরী ও মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপ ফাঁস করা হয়। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আসলে সরকারের পতনে কতটা কার্যকর হবে তা বোঝা যাচ্ছেনা। তবে এটা নিয়ে যে একটা শোরগোল হচ্ছে, পাবলিকের যে একটা আগ্রহ আছে, মিডিয়াগুলো যে এর পেছনে বেশ দৌড়াবে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আর সে কারনেই পরিকল্পিতভাবে এই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছে শুরু থেকেই । বলা হয়েছে কামাল হোসেন সিঙ্গাপুরে, এমনকি ঐক্য নেতাদের সাথে সরকারের দালালির অভিযোগও তোলা হয়। এই ঐক্য প্রক্রিয়াটি নষ্ট করার জন্য সরকার সবচেয়ে বেশী যে গুটিটি ব্যবহার করে তা হলো বি চৌধুরী আর তার গুণধর পুত্র মাহী বি চৌধুরী। তারা নানা সময় নানা শর্ত আরোপ করছিল। বাহ্যত ক্ষমতার ভারসাম্য ও জামায়াতকে বাদ দেয়ার শর্ত দিলেও ভেতরে ভেতরে আসলে বি চৌধুরীর খায়েশ ছিল পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। মাহী বি চৌধুরীও নানা কিছুর ইজারার হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকার স্বপ্ন দেখছিলেন।
কিন্তু জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা তাদের এই কৌশলটি ধরে ফেলেন। সরকারের ইন্ধনেই বি চৌধুরীরা এসব করছেন এটা তারা বুঝে ফেলেন। মাহী বি চৌধুরীর ইয়ং জেনারেশন নিয়ে কাজের আড়ালে ভিন্ন স্বার্থান্বেষী কৌশলটিও তারা অনুধাবন করতে পারেন। এমনকি বি চৌধুরী পরিবারের সাথে গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগের বিষয়টিও তাদের আশংকায় ধরা পড়ে। ফলে শেষ মুহুর্তে ড. কামাল হোসেন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে বি চৌধুরীকে এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেন। সরকারের ঐক্য প্রক্রিয়া ভাঙ্গার সর্বশেষ কৌশলটি এভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা আরেকটি নোংরা কৌশলে অবতীর্ণ হন। আবারও সেই নোংরা ফোনালাপ কৌশল।
কর্তৃপক্ষের ইন্ধনে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ফোন দেন মাহী বি চৌধুরী। তাদেরকে বাদ দিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়া করায় তাকে তুলোধুনো করেন। যা মন চায় বলেন। মান্নাও নিজেকে ডিফেন্ড করেন। এই ফোনালাপ নিয়ে কোন আগ্রহ নেই কারো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ফোনালাপটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কিভাবে এটা মিডিয়ায় চলে আসে? আমাদের কারও ফোনালাপ কি এভাবে রেকর্ড করে পাবলিকলি নিয়ে আসা সম্ভব তাও এতটা কম সময়ের মধ্যে? বোঝাই যাচ্ছে যে, কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমেই মাহী ফোনটি করেছিলেন আর সে কারনেই প্রযুক্তির অবাধ সহায়তা পেয়েছেন তিনি।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার জন্য মিডিয়াগুলো সেই ফোনালাপ প্রচার করছে ঠিকই কিন্তু আসলে এই ফোনালাপটি শুনে কোন মহলই ঐক্য প্রক্রিয়াকে সমালোচনা করেছে বলে জানা নেই আমার। বরং মাহী বি চৌধুরীর মুখোশ যে আরেকবার খুললো, বি চৌধুরী পরিবারের ক্ষমতালোভ এবং সরকারের সাথে গোপন আঁতাতের বিষয়টি যে আরেকবার জাতির সামনে প্রমানীত হলো তাতে কোন সন্দেহ নেই।