অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ১৫ দিন ধরে গুম রাখার পর সেই ৫ তরুণকে অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে তরুণদেরকে গুম রাখার পর এখন তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিনজন ও পরে তাদের সূত্র ধরে যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ এলাকার মেস থেকে আরও দু’জনকে তুলে নেয় সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন- ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাফিউল আলম, তার ভাই মনিরুল আলম, ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শফিউল্লাহ, চাকরিজীবী আবুল হায়াত ও যাত্রাবাড়ীর ডগাইর ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র মোশারফ হোসাইন মায়াজ।
নিখোঁজ পাঁচজনের সন্ধান চেয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) সংবাদ সম্মেলন করেন স্বজনরা। ওই সময় তারা জানান, এ ব্যাপারে বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করতে গেলে তা নেয়নি পুলিশ। এমনকি তাদের আটকের কথাও ডিবি বা কোনো থানা পুলিশ স্বীকার করেনি।
শাফিউল আলম ও মনিরুল আলমের মা রমিছা খানম তখন সাংবাদিকদের জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ্ব পালন শেষে ঢাকায় পৌঁছে রাত সাড়ে ৮টায় বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য তারা মাইক্রোবাসে উঠেন। এসময় হঠাৎ একদল অপরিচিত লোক তার দুই ছেলে ও তাদের বন্ধু আবুল হায়াতকে বহু মানুষের সামনে গাড়ি থেকে নামাতে টানা হেঁচড়া শুরু করে। তাৎক্ষণিক তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ওরা পরিচয়পত্র ও অস্ত্র দেখিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ দাবি করে। পরে চোখের সামনে থেকেই তিন তরুণকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। সে রাতেই তার ছেলে শাফিউলকে নিয়ে গভীর রাতে তাঁর বাসায় যায় তারা। এ সময় বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা শাফিউলের অপর দুই রুমমেট সফিউল্লাহ ও নবম শ্রেণীর ছাত্র মোশারফ হোসাইন মায়াজকেও তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
এতদিন ধরে অস্বীকার করে আসলেও দীর্ঘ ১৫ দিন পর বৃহস্পতিবার নিখোঁজ ৫ তরুণকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। তরুণদেরকে এতদিন ধরে গুম রাখার ব্যাপারে আদালত কিছুই জানতে চায়নি পুলিশের কাছে। উল্টো তাদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। আদালত ও পুলিশের এমন কান্ডে হতবাক হয়েছেন নিখোঁজের স্বজনরা। তারা বলেন, আদালত থেকে যদি ন্যায় বিচার না পাই তাহলে আমরা কার কাছে যাবো?
স্বজনরা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করতে আদালতই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অথচ সেই আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুলিশ ৫ তরুণকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে গুম রেখে এখন আদালতে সোপর্দ করলো। আদালত পুলিশকে এ নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। এমন আইন পাস হয়ে লাভ কি হলো তাহলে?
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাউকে আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আদালতে হাজির করার বিধান রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনই যখন আইন আদালতের তোয়াক্কা করে না তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? যারা আইনের বাস্তবায়ন করবে তারাই আইনের লঙ্ঘণ করছে! ১৫ দিন ধরে তরুণদেরকে গুম করে রাখার মাধ্যমে স্বজনদেরকে যে মানসিক যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে, যেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখা হয়েছে, এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘণ। এর বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। এর জন্য অবশ্যই পুলিশকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিন। নইলে আদালত তার মর্যাদা হারাবে। আইন আদালতের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে।