মুসাফির রাফি, অ্যানালাইসিস বিডি
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একের পর এক জোট ঘোষণা হচ্ছে। লুটপাটের রাজনীতির অবসানের নামে নিজেদের লুটপাট আর ক্ষমতার ভাগাভাগির রঙ্গীন স্বপ্ন নিয়ে এইসব জোট ও রাজনৈতিক প্লাটফর্মগুলো গঠিত হচ্ছে। এসব জোট বা ফোরামের কোনটার শীর্ষপদে পরিচিত মুখ আছেন কিন্তু পরিচিত দল নেই। আর কোন কোন জোটের সাথে পরিচিত মুখ বা পরিচিত দল কিছুই নেই। মিডিয়ায় তাও এদের নিয়ে মাতামাতি করে।
এগুলো আসলে কোন জোট নয়, বরং রাজনীতিতে অসহনীয় যানজটের মত ভিন্নধারার কোন জট তৈরীর উদ্দেশ্য নিয়েই এই তথাকথিত ফোরাম বা জোটগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বি. চৌধুরী আর ড.কামাল হোসেনের হালে পানি না পাওয়া যুক্তফ্রন্ট তথা জাতীয় ঐক্যের গঠনের পর সর্বশেষ ৪১টি দল নিয়ে আরেকটি জোট গঠিত হয়েছে। আমি কি বলবো, পাঠকরাই এই জোটের অংশীদারগুলোর নামে চোখ বুলিয়ে দেখুন, আদৌ কোন নাম পরিচিত মনে হয় কিনা!
নবগঠিত ৪১ দলীয় জোটের অংশীদার এমন উল্লেখযোগ্য কিছু দল হলো, আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধ লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ, রেডষ্টার পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট, গণ সংগ্রাম পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমুল কংগ্রেস, লিবারেল পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমুল পার্টি, বাংলাদেশ প্রেমিক পার্টি, গণতান্ত্রিক ঐক্য, কৃষক প্রজা পার্টি, বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ সাধারণ পার্টি, বাংলাদেশ ডেভেলফম্যাট পার্টি, ডেমোক্রেটিভ প্রোগ্রেসিভ পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রটিভ পার্টি, সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ, বাংলাদেশ পঞ্চায়েত পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, ইসলামী গণতান্ত্রিক লীগ, ইউনিট ফর বাংলাদেশ, ডেমোক্রেটিভ পিপলস্ পার্টি, বাংলাদেশ জয়বাংলা লীগ, বাংলাদেশ জালালী পার্টি, মহিলা লীগ, জনতা পার্টি, বাংলাদেশ প্যান্টস পার্টি, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশ মানব বন্ধু ।
এসব প্যান্টস পার্টি, প্রেমিক পার্টি, মানববন্ধু পার্টি দিয়ে জাতির উন্নতি কিভাবে হবে? তার চেয়েও বড় কথা হলো এরা সবাই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ার কথা বলে। গত ১০ বছরের মিডিয়া ক্যাম্পেইন ও নানা রকমের প্রোপাগান্ডার কারনে বাংলাদেশের মানুষ এখন এসব রেটোরিকগুলো বেশ ভালমত বোঝে। মূলত এরা সবাই ইসলামী রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশের কথা বলে।
আলোচিত জাতীয় ঐক্য বা যুক্তফ্রন্টও অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার নিমিত্তে ইসলামী দলগুলোকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চায় না। আমার মৌলিক প্রশ্ন হলো, এই যদি তাদের খায়েশ হবে, তাহলে আওয়ামী লীগের সাথে তাদের পার্থক্য থাকলো কি? আর আওয়ামী লীগকে সরিয়ে আমরা তাদেরকে ক্ষমতায় আনবোই বা কেন?
আমরা বরং এমন দল বা জোট চাই, যারা বাংলাদেশে বিগত ১০ বছর ধরে চলমান রাজনীতির বিপরীত ট্রেন্ড চালু করার কথা বলবে। বিগত ১০ বছরে আমরা অন্যায্যভাবে মানুষের যে মুক্তির গান শুনেছি, তাকে থামিয়ে প্রকৃতার্থেই মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করবে। অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মমুক্ত চেতনায় সে মুক্তি সম্ভব নয়।
বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা জোটগুলো ইসলামী দলগুলোকে বয়কট করেছে। অথচ এই ইসলামী দলগুলোই বিগত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশী জুলুম ও মিথ্যা প্রচারণার শিকার হয়েছে। এই মজলুমদেরকে বাদ দিয়ে কী জোট, কিসের জোট? বরং এমন জোটই প্রত্যাশিত হবে যেখানে মজলুমদের প্লাটফর্মটাই সবচেয়ে বেশী অংশীদারিত্ব পাবে।
আমরা এমন জোট চাই, যারা বিগত ১০ বছরে স্বামী হারানো বিধবা কিংবা সন্তান হারানো মায়েদের জন্য সম্মানের ব্যবস্থা করবে। তাদের সন্তানদের সামাজিক পরিচয়, সম্মান ও স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে। বিগত সময়ের নির্যাতনে যারা পঙ্গু হয়ে আছেন রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। যেসব আলেম ও ধর্মীয় নেতারা মিথ্যা প্রচারণার কারণে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন, তাদের সম্মান পুনরুদ্ধারে কাজ করবে।
সকল রাজনীতিবীদকে মনে রাখতে হবে, জনগনের পালস না বুঝলে রাজনীতি করা যায় না। মজলুমের আর্তনাদ সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌছে যায়। তাই মজলুমকে যারা সাথে নিতে ভয় পায়, মজলুমদের পাশে যারা বিপদের সময় না দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে রাজনীতিতে নামে, তারা কখনো জনগনের সমর্থন পাবেনা। হালুয়া রুটি আর ইজারার শেয়ার পাওয়ার খোয়াব দেখেই তাদের বাকি জীবনটা কেটে যাবে।