অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আটক হওয়ার পরও বিএনপিসহ বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো বড় কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। কিন্তু সেই ব্যর্থতার পরও গত জুলাই মাসে হওয়া ছাত্র আন্দোলন তাদেরকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছে। সম্প্রতি ‘Student protests stir opposition hopes before polls’ শিরোনামে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটির ভাষান্তর করেছে অ্যানালাইসিস বিডি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের ঘোষনা এসেছে। এই অবস্থায় ছাত্র আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনকে দমাতে গিয়ে সরকারের ক্র্যাকডাউনের বিরুদ্ধে জনমনে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে তার পুরো ফায়দা বিরোধী শিবিরেই যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি বাস দুর্ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ যেভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো তাতে এটা বেশ বোঝা গেছে যে, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের উপর মানুষ আসলে কতটা ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
পর্দার দোকানে কাজ করেন রবিউল আলম। তিনি জানান, সরকার এখানে সব কিছুকে নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে। বাংলাদেশে এখন কোন শ্বাস নেয়ার মত স্থান নেই। কোন স্বাধীনতা নাই। গণতন্ত্র নাই। এমনকি আপনি ফেসবুকেও সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন না।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন অনেকেই রবিউলের মতই কথা বলতে শুরু করেছেন।
সরকার সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনের জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করলেও বিএনপি বরাবরই তা অস্বীকার করেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, “ছাত্রদের এ আন্দোলন ছিল স্বতস্ফুর্ত এবং অরাজনৈতিক। এই ছাত্ররা আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে এই রাষ্ট্রের আসলেই সংস্কার প্রয়োজন।”
ছাত্রদের এই আন্দোলনকে প্রশমিত করতে শেখ হাসিনার সরকার অবশ্য গাড়িচালকদের ৩ বছরের জায়গায় ৫ বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে সম্প্রতি একটি আইনও পাস করেছে। তবে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে যেভাবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর চড়াও হয়েছে এবং নানা পেশার মানুষকে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে আটক করেছে তাতে এ কথা পরিস্কার যে বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা বলতে এখন আর কিছু নেই।
দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা হাসিনার সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উপরও বেশ বড় আকারের ক্র্যাকডাউন চালিয়েছে। তারা প্রথম মেয়াদে জামায়াতের নেতাদেরকে কথিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডিত করে অনেককেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। আর এ মেয়াদে তারা বিএনপিকে টার্গেট করেছে। গত ফেব্রুয়ারীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে একটি কথিত দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের কারাদন্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। এর পাশাপাশি গত মে জুন মাসে মাদক দমন অভিযানের নামে সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই শতাধিক মানুষকে মাত্র দুই মাসে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের পুলিশ বিরোধী দলগুলোর মিছিল মিটিংয়ে রাবার বুলেট, জলকামান এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে তাদেরকে রাস্তায় জমায়েত হতে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত আন্তর্জাতিক নানা মহল।
বিএনপির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের ফায়দা হাসিল করার অভিযোগ তুলেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের বাইরে এবং ভেতরে এমন কিছু শক্তি আছে যারা জনপ্রিয় কোন ইস্যুকে দেখলেই তাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়। তারা একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারকে বিপদে ফেলতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, ছাত্রদের স্বত:স্ফুর্ত এই আন্দোলন প্রমান করেছে যে, জনগন আওয়ামী লীগের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যাই বলুক না কেন, আন্দোলন দমনের নামে সাধারন ছাত্রদের উপর সরকার চড়াও হওয়ায় দেশের তরুণ সমাজ ও অভিভাবক মহলের একটি বড় অংশ সরকারের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে আছে। ভোটের মাঠে সেই অসন্তোষের কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব বিরোধী মহল বিশেষ করে বিএনপির উপর পড়বে বলেই বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।