অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ভারত ভিত্তিক স্ক্রল ইন ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন নিয়ে একটি কলাম প্রকাশিত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরীহ ও নিরস্ত্র ছাত্র-ছাত্রীদের উপর সরকারী দলের নেতাকর্মী এবং পুলিশেরা যেভাবে হামলা চালিয়েছে তাতে এই ঘটনার ব্যপারে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হওয়ার মত কোন অবস্থা আর নেই।
কলামটিতে মন্তব্য করা হয়, এবারের এই আন্দোলনটি ছিলো একেবারেই স্বতস্ফুর্ত যেখানে রাষ্ট্রের বেসামরিক নাগরিকেরা রাষ্ট্রের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা ও আনুগত্যহীনতা প্রকাশ করেছেন। প্রথমে রাজধানী ঢাকায় শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে এটা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনের প্রতি তাদের আকুন্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বরাত দিয়ে কলামটিতে বলা হয়, সপ্তাহ খানেক ধরে চলা এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা নিরীহ ছাত্র ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালায়। ২৯ জুলাই রাজধানীতে বাসের চাপায় দুই ছাত্রের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আন্দোলনটির সূত্রপাত হয়। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা নিরাপদ সড়কের জন্য নানা ধরনের অহিংস কর্মসূচী এই সময় পালন করে।
কলামে দাবী করা হয়, আন্দোলনকারীদের উপর সরকার প্রথম দিকে না হলেও শেষের দিকে চড়াও হয়েছে যা দেশের গনতান্ত্রিক কাঠামো ও পরিবেশকে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যদিও সরকার এই আন্দোলনের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করেছে তথাপি তা সাধারন মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায়নি কেননা সরকার এখনো পর্যন্ত এই আন্দোলনের সাথে জামায়াত বা বিএনপির সম্পৃক্ততার কোন প্রমান উপস্থাপন করতে পারেনি। সরকার যেভাবে গায়ের জোরে বিরোধী মহলকে এর সাথে জড়িয়েছে তা অনেকটা স্বৈরাচারী শাসনের সমতুল্য বলে কলামে মন্তব্য করা হয়।
ইকতিসাদ আহমেদের লেখা এই কলামে বলা হয়েছে, সরকার এই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকে তেমনভাবেই দমন করেছে যেমনটা তারা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে শায়েস্তা করার বেলায় করে থাকে। এর আগে গত এপ্রিল ও মে মাসেও বাংলাদেশে ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবীতে আরেকটি আন্দোলন করেছিল। সরকার সেটাকে দমন করার জন্য মৌখিকভাবে দাবী মেনে নেয়ার ঘোষনা দিলেও কার্যত তারা সেখান থেকে পরবর্তীতে সরে যায় এবং আন্দোলনের নেতাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যপকভাবে নির্যাতন করে। সরকারের এরকম প্রবঞ্চণামুলক আচরনও ছাত্রদের আস্থার হানি ঘটিয়েছে। সেই আন্দোলনকেও সরকার সহিংসতার মাধ্যমেই মোকাবেলা করেছে।
স্ক্রল ইন মনে করে বাংলাদেশের এই ক্ষুদে আন্দোলনকারীরা মূল ধারার সুশীল সমাজকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এরা আরো নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়তে পারে বলেই সরকার তাদেরকে ভয়ও পেয়েছে যার ফলে তারা কঠোর অবস্থানে চলে গিয়েছে।
মূল ধারার সুশীল সমাজ এই সরকারের বিরুদ্ধে এতদিন কথা না বলার কারনেই সরকার এত কঠোর হাতে দেশ চালাতে পেরেছে। তাদেরকে সরকার নানা ধরনের আর্থিক ও অন্যন্য সুবিধাদি দিয়েই হাতে রাখার চেষ্টা করেছে বরাবর। সরকার তাই এই ছাত্রদেরকে নিয়ে নানা আশংকায় পড়ে গিয়েছিলো। তারা অন্য সব আন্দোলনের মত এটাকেও দেশ বিরোধী হিসেবে চিত্রায়িত করে একে দমনের চেষ্টা করেছে। তবে তারা যাই করুক না কেন স্ক্রল ইন বলছে, এটা পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন মহল ও অভিজাত সুশীল সমাজের জনপ্রিয়তা আশংকাজনকভাবেই হ্রাস পাচ্ছে।
কলামটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই থেকেও কিছু উদ্বৃতি তুলে ধরা হয়। শেখ মুজিব লিখে গেছেন, “সরকার অনেক সময় দেশে ভয়ের ও আতংকের পরিবেশ তৈরী করে যাতে কেউ সরকারের সমালোচনা করার সাহস না পায়। সরকার মনে করে যে পোষা গুন্ডাদেরকে দিয়ে জনগনের আওয়াজকের থামিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব হয়না।”
স্ক্রল ইনের মূল কলামটির লিংক: Bangladesh has damaged its democratic credentials with the latest crackdown