অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী গড়ে উঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে সরকার নির্মমতার পথ বেছে নিয়েছে। গত তিনদিন যাবত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ক্ষমতাসীন দলের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত কায়দায় নৃশংস হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে।
গত শনিবার রাজধানীর ঝিগাতলায় কোমলমতি শিশুদের ওপর সরকারের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে তাতে মানুষের মনে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এরপর রোববার ধানমন্ডিতে ছাত্রলীগের হামলার ছবি তোলার কারণে আন্তর্জাতিক সংবাদ এজেন্সি এপির ফটো সাংবাদিকসহ ৫ জন সাংবাদিককে নির্মমভাবে পিটিয়েছে তারা। আর সোমবার শিক্ষার্থীরা যেখানে নেমেছে সেখানেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে।
আর তাদেরকে সহযোগিতা করেছে সরকারের আরেক পেটোয়া বাহিনী পুলিশ। রাজধানীর বসন্ধুরায় পুলিশ আজ শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি করেছে। রামপুরা ব্রিজ, শাহবাগ, আহসানুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের হামলা, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও গুলিতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে সরকার যেভাবে নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নিয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন দমাতেও সরকার একই পথ বেছে নিয়েছে।
এছাড়া সরকার এখন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে উসকানি দেয়ার কথিত অভিযোগ এনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ বিশিষ্টজনদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমকে অপহরণের পর তার বিরুদ্ধে আইসিটি মামলা দিয়ে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ৩ জন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে।
তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আন্দোলন এখন আর ছোটদের হাতে নেই। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের রেখে যাওয়া আন্দোলন চালাচ্ছে এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। সরকারের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশ এসে হুমকি দিলেই যে আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। আন্দোলন দমাতে সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ণ যত বাড়ছে আন্দোলনের প্রতি জনগণের সহানুভূতি ততই বাড়ছে। সরকারের প্রতিও মানুষের তত ঘৃনা সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন, দেশে এখন যা হচ্ছে সবই মানুষের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। গুলি করে ও পিটিয়ে মানুষের মনের ক্ষোভ দমন করা যায় না। নির্যাতন যত বাড়বে মানুষের মনের ক্ষোভও ততই বাড়বে।
সরকারকে এখন মনে রাখতে হবে, শিশু-কিশোরদের আন্দোলন চলে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হাতে। নিপীড়নের মাত্রা যদি বাড়তে থাকে তাহলে এই আন্দোলন হয়তো বা আর শিক্ষার্থীদের হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে জনগণের মাঝেও। আর একবার যদি গণবিস্ফোরণ শুরু হয়ে যায় তাহলে দমন করাতো দূরের কথা সরকার ও প্রশাসনের লোকজন পালিয়ে যাওয়ার পথ পাবে না।