‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনের পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকারীদের মূল দাবী ছিল বেপরোয়াভাবে ও অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড ঘটলে চালকের মৃত্যদণ্ড। কিন্তু সেই দাবীকেই উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তাদের সকল দাবী মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু মূল দাবীকে উপেক্ষা করে হত্যাকাণ্ড ঘটালে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে মাত্র পাঁচ বছর তাও আবার প্রমাণ সাপেক্ষে।
স্কুল-কলেজের ছাত্ররা প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দাবী মেনে নেয়ার ঘোষণা বিশ্বাস করতে পারেনি। কারণ হিসেবে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলো। তাই তারা আজও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। কোটার ব্যাপারে হাসিনা মহান সংসদে বলেছেন কোন কোটাই থাকবে না। আজ পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাতো নেয়াই হয় নি উল্টো তিনি এখন বলছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার সম্ভব নয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতই ছাত্রদের সাথে প্রতারণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। আজ ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ নামে একটি আইনের খসড়া দ্রুত চূড়ান্ত করেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার দ্রুত একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই আইনে উল্লেখ আছে, বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা নিহত হলে মামলা হবে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায়। এই ধারায় সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। বর্তমানে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এ বিষয়ে এনালাইসিস বিডিকে বলেন, ‘নতুন আইনে শাস্তি অত্যন্ত কম রাখা হয়েছে। আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলার আগে আমাদের দেখানোর কথা ছিল, আলোচনা করার কথা ছিল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই আইনকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারা বলেছে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চলতে থাকবে। তাদের দাবী বর্তমান আইনের সুযোগে নিরীহ মানুষ পিষে ফেলার সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারবে না ড্রাইভাররা। প্রমাণ সাপেক্ষে মাত্র পাঁচ বছরের জেল কখনোই একজন বেপরোয়া ড্রাইভাবে সচেতন করে তুলতে পারবে না।
আজকের আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্ররা তাই হাসিনাকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে। আজ শাহবাগ, বসুন্ধরা গেট, রামপুরা, আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের আন্দোলন করে যাচ্ছে। সকাল থেকেই পুলিশের সাথে কয়েকটি স্থানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশ আটক করেছে শতাধিক ছাত্রকে।
এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিবহন শ্রমিকেরা। তারা স্বাগত জানিয়েছে নতুন আইনকে। গতকাল সকাল ছয়টা থেকে তাদের অঘোষিত ধর্মঘট চলছিলো। আজ নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার সুবাধে গাড়ি চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে। দেশের সবগুলো রুটে দূরপাল্লার গাড়িগুলো ছেড়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ সংশোধন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে একটি আইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। এরপর গত বছরের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে কিছু পর্যবেক্ষণসহ আইনটি নীতিগত অনুমোদন পায়। আইনে মন্ত্রণালয়ে সড়ক পরিবহন আইনটি মতামতের জন্য পাঠালে তারা অপরাধ ও দণ্ডের বিধান পর্যালোচনা করে খসড়া আইনটি সংযোজন ও পরিমার্জনের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদন হুবহু রেখে আজ সোমবার আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।