অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নিরাপদ সড়ক ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন চলছে। শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তা থেকে ক্লাসে ফেরানোর জন্য সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও পুলিশ প্রশাসন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও প্রতিদিন শিক্ষার্থীদেরকে নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের দাবি একটাই- দাবি মানার বাস্তব সম্মত ঘোষণা দিতে হবে। এবং এসব বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আর গত এক সপ্তাহ যাবত চুপ করে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলন নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেন নি। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন সামাল দিতে বা শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে ফেরাতে তার মন্ত্রী-এমপি ও প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপই যখন কাজে আসছে না, তখন নিজেই মুখ খুললেন লাইসেন্সবিহীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে গণভবনে একটি অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় তিনি হালকা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে, এবার ক্লাসে ফিরে যাও’।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সরকারের মন্ত্রী-এমপি সহ পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও ধারণা করেছিল যে, এবার হয়তো তারা রাস্তা ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর পর ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা না ছাড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।
কিন্তু পরক্ষণেই দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি উচ্চারণের পর পরই শিক্ষার্থীরা হুড় হুড় করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নেমে অন্যদিনের মতো অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু করে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো-অন্যদিন শুধু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলেও রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। বলা যায়- লাইসেন্সবিহীন পুলিশ মন্ত্রীদের মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা পাত্তাই দিলো না। রাজধানীর শাহবাগে ছিল শিক্ষার্থীদের স্মরণকালের জমায়েত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে ঝিগাতলা যাওয়ার ঘটনা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে চমকে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পরও তারা কেনো রাস্তায় আছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেই আন্দোলনের মুখে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু, আন্দোলন শেষ হওয়ার পর ভুলে যান। দেখা গেছে, কোটা আন্দোলনের সময় সংসদে দাড়িয়ে তিনি কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু, পরে আমরা কী দেখতে পাচ্ছি?
তারা বলেন, নিরাপদ সড়ক নিয়েও প্রধানমন্ত্রী এমনটা করতে পারে। তাই শুধু দাবি মানলে হবে না, এসব নিয়ে আইন পাস করতে হবে। এবং কার্যকর বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।