অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতার শেষ মুহূর্তে এসে একেবারেই স্বস্তিতে নি:শ্বাস নিতে পারছে না আওয়ামী লীগ সরকার। একের পর এক সংকটে পড়ে যেন মাঝে মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে আসছে। উত্তাল সাগরে পাড়ি দেয়া ডুবু ডুবু নৌকার মতোই এখন চলছে শেখ হাসিনার সরকার। হয়তো ঝড়ের গতি আরেকটু বাড়লে যেকোনো মুহূর্তে ডুবে যেতে পারে।
মাত্র কয়েক মাস আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনের কারণে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরে কোনো উপায় না দেখে তড়িগড়ি করে সংসদে দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন- কোনো কোটাই থাকবে না।
পরে অবশ্য শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, দেশে অরাজকতা দেখে আমি তাৎক্ষণিক কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলাম। এরপর কোটা আন্দোলনকে দমন করতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের পথ বেছে নেয় শেখ হাসিনা। কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে গুম করে নিয়ে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
শেখ হাসিনা মনে করছিলেন, বাংলাদেশে আর কোনো আন্দোলন হবে না। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, প্রশাসনসহ সবই তার নিয়ন্ত্রণে। সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার মতো কেউ আপাতত দেশে নেই। আর কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীরা যে সরকারের অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আসবে এটা শুধু সরকার নয়, কেউই কল্পনাও করেনি।
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৯ দফা দাবি নিয়ে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনটি প্রথম দিকে রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। আন্দোলনের শুরুতে শুধু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিলেও এখন রাস্তায় নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও। এমনকি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারাও এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে।
এদিকে, গত সপ্তাহেই সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকার মনে করেছিল দাবি মানার ঘোষণা দেয়ার পরই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সরকারকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। বলা যায়, বিগত কয়েক দিন ধরে দেশের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই। সরকারের এমপি-মন্ত্রীরাও স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা করতে পারছে না। পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও বলা যায় শিক্ষার্থীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। কার্যত রাস্তায় যারাই বেরুচ্ছে তারা মূলত শিক্ষার্থীদের নির্দেশনার আলোকেই চলতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করছেন, চলমান আন্দোলনের নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের হাতে নেই। কোনো একটি শক্তিশালী মহল আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে। স্কুল শিক্ষার্থীদেরকে সামনে রেখে তারা দেশে কিছু একটা করতে চাচ্ছে। এজন্য সরকার আন্দোলন দমাতে এখনো কোনো বড় ধরণের অ্যাকশনে যাচ্ছে না। সরকার এটাকে কৌশলে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে।
গত এক সপ্তাহের সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশা নেমে এসেছে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝেও। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতে সরকার খুবই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে।